গোসলের আগে নাকি পরে? শরীরে তেল দেওয়ার সঠিক সময় জানুন! গোসলের আগে ছোট্ট শিশুকে তেল মালিশ করানোর অভ্যাস বহু পরিবারেই চালু আছে। আর এই অভ্যাসের পেছনে রয়েছে ত্বকের যত্নের একটি সহজ অথচ কার্যকর উপায়। তবে বয়স বাড়ার পরও তেল মালিশ কিন্তু ত্বকের জন্য সমান উপকারী। যে কোনো বয়সেই ত্বকের সেরা বন্ধু হিসেবে কাজ করে তেল। কিন্তু একটা প্রশ্ন প্রায়ই উঠে আসে—গোসলের আগে তেল মালিশ করা ভালো, নাকি গোসলের পরে? আর সব তেল কি সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযোগী? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে নেওয়া জরুরি, কারণ তেল মালিশের পদ্ধতি ও সময় সঠিক হলে ত্বকের যত্ন আরও ভালোভাবে নেওয়া সম্ভব।
ময়েশ্চারাইজারের জায়গায় তেল হতে পারে একটি দারুণ প্রাকৃতিক বিকল্প। এটি শুধু ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতেই সাহায্য করে না, বরং ত্বকের উজ্জ্বলতাও বাড়ায়। নিয়মিত তেল মালিশ করলে ত্বক দীর্ঘ সময় তরুণ থাকে, কারণ এটি বলিরেখা আসার প্রক্রিয়া ধীর করে দেয়। অর্থাৎ, ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে এবং প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের যত্ন নিতে তেল হতে পারে আপনার নির্ভরযোগ্য সঙ্গী।
গোসলের আগে তেল মালিশ করার পর ত্বকে তেল অনেকটাই ধুয়ে যায়, যার ফলে তেলের দীর্ঘস্থায়ী কার্যকারিতা কমে যায়। তবে ত্বকের যত্নে সেরা ফল পেতে হলে তেল মালিশ করার সময়টাকে একটু বদলাতে হবে। ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড অ্যাসথেটিক ডার্মাটোলজি বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. সিনথিয়া আলমের মতে, গোসলের পরপরই, যখন ত্বক এখনও ভেজা থাকে, তখন তেল মালিশ করলে ত্বক সবচেয়ে ভালোভাবে তেলের পুষ্টি শোষণ করতে পারে।
Table of Contents
শরীরে তেল দেওয়ার সঠিক সময়
তেল মালিশ করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো ঘুমানোর আগের সময়টা। যদি রাতে গোসল করেন, তাহলে গোসলের পরপরই তেল মালিশ করে নিতে পারেন। আবার দিনের বেলায় গোসল করলে, তখনও একই নিয়ম মেনে তেল মালিশ করা যেতে পারে। তবে একটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরি—তেল মালিশ করার পর বাইরে বেরোলে রোদের তাপ কম থাকলেও সানস্ক্রিন ব্যবহার অবশ্যই করতে হবে। কারণ ত্বক তখন রোদের ক্ষতিকর প্রভাবের প্রতি আরও বেশি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। এ ছাড়া, তেল মালিশের পরপরই বাইরে গেলে ধুলাবালির কারণে ত্বকে ময়লা আটকে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই বাইরে যাওয়ার আগে তেল মালিশ করতে চাইলে কেবল শরীরের সেই অংশে করুন, যা পোশাকে ঢাকা থাকে।
যেভাবে তেল মালিশ করবেন
তেল মালিশ করার সঠিক পদ্ধতি কিন্তু ত্বকের যত্নে বড় ভূমিকা রাখে। তেল মালিশ করতে হয় বৃত্তাকার গতিতে এবং ত্বকের নিচের অংশ থেকে ওপরের দিকে। এভাবে মালিশ করলে তেল ত্বকে ভালোভাবে শোষিত হয়, যা ত্বকের পুষ্টি ও আর্দ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে। তেলের পরিমাণ ঠিক রাখা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মুখের জন্য মাত্র চার ফোঁটা তেলই যথেষ্ট। এই পরিমাণ থেকেই আন্দাজ করতে পারবেন, পুরো শরীরের জন্য কতটা তেল ব্যবহার করবেন। তবে মনে রাখবেন, অতিরিক্ত তেল ব্যবহার ত্বকের জন্য ভালো নয়। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী তেলের সঠিক পরিমাণ ঠিক করে নিয়ে নিয়ম মেনে তেল মালিশ করলে ত্বক পাবে তার প্রয়োজনীয় যত্ন আর পুষ্টি।
কোন তেল বেছে নেবেন
- আপনার ত্বকের ধরন যেমনই হোক, নারকেল তেল সবসময়ই একটি নিরাপদ ও কার্যকর বিকল্প। এটি শুধু ত্বক নরম রাখে না, বরং বয়োজ্যেষ্ঠদের ত্বকের যত্নেও সমানভাবে কার্যকর।
- জলপাই তেলও শরীরের জন্য বেশ উপকারী। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে এটি কিছুটা কম কার্যকর হতে পারে।
- শর্ষের তেল হাত ও পায়ের পাতায় ব্যবহার করতে পারেন। এটি ঠান্ডা আবহাওয়ায় বিশেষভাবে আরামদায়ক।
- যদি আপনার ত্বক তৈলাক্ত হয়, তাহলে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে বা মেকআপ তোলার জন্য জোজোবা তেল বা আর্গন অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এই তেল ত্বকে আটকে না থেকে ময়লা বের করে আনতে সাহায্য করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। তবে ভারী তেল ব্যবহারের কারণে ব্রণের ঝুঁকি থাকতে পারে, তাই সতর্ক থাকুন।
- ব্রণ থাকলে রাতে মুখে টি ট্রি তেল ব্যবহার করতে পারেন। এটি শুধু ব্রণের সমস্যা কমায় না, বয়সের ছাপ দূর করতেও সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক আরও সুন্দর ও সুস্থ থাকবে।
যদি আপনি ভ্রু ঘন করতে চান, তবে ভ্রুর জায়গায় রোজমেরি তেল ব্যবহার করতে পারেন। এটি নিয়মিত ব্যবহারে ভ্রু ঘন করতে সাহায্য করে। তবে ত্বকের জন্য গোলাপের তেল কিছুটা অস্বস্তিকর হতে পারে, কারণ এটি ত্বকে আটকে থাকে এবং দীর্ঘসময় ব্যবহারে ত্বকে দাগ পড়তে পারে, তাই এই তেল এড়িয়ে চলা ভালো। একজিমা বা সোরিয়াসিসের মতো সমস্যা থাকলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার ফলে সমস্যা বাড়তে পারে। কিন্তু নিয়মিত তেল মালিশ করলে এই সমস্যাগুলো কিছুটা কমে যেতে পারে এবং ত্বক আরও নমনীয় ও মসৃণ হয়ে উঠবে। শিশুদের ত্বকে তেল মালিশ করে রোদে নিয়ে যাওয়া ঠিক নয়, কারণ এর ফলে ত্বকে অস্বস্তি এবং কালচে দাগ পড়তে পারে। শিশুদের গায়ে রোদে তেল না মেখে ভালভাবে সুরক্ষা দিন।