JKNews24 Bangla, কলকাতা: দোষী সাব্যস্ত হতেই শিয়ালদা কোর্টে কী বললেন সঞ্জয়?, গোটা বাংলা আজও অপেক্ষায়—সত্যের উদ্ঘাটন হবে তো? গত বছর ৯ আগস্ট রাতে কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সেমিনার রুমে উদ্ধার হয়েছিল এক তরুণী চিকিৎসকের নিথর দেহ। মাত্র দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া, যার ভবিষ্যৎ ছিল উজ্জ্বল, স্বপ্ন ছিল মানুষের সেবা করার। কিন্তু হঠাৎই সব শেষ! অভিযোগ ওঠে, তাঁকে নির্মমভাবে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনা রাতারাতি চাঞ্চল্য ছড়ায়। শোক, ক্ষোভ আর ন্যায়বিচারের দাবিতে সরব হয়েছিল সাধারণ মানুষ। তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশ ঘটনার পরের দিনই সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেপ্তার করে।
গত ১৩ আগস্ট কলকাতা হাইকোর্ট এই চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্তভার তুলে দিয়েছিল CBI-এর হাতে। এরপর ১৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টও মামলাটি শোনার আগ্রহ প্রকাশ করে। তদন্তের গতিপথ তখন আরও মোড় নেয়, কারণ সেই সময়ই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ ওঠে। তবে শুধু অনিয়মই নয়, তাঁর বিরুদ্ধে উঠে আসে আরও কিছু ভয়ংকর তথ্য, যা নতুন করে রহস্য তৈরি করে। কিন্তু দিনের পর দিন তদন্ত চললেও ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সঞ্জয় রায় ছাড়া আর কারও বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো প্রমাণ মেলেনি। যা কিছু তথ্য উঠে এসেছে, তার সবটাই সঞ্জয়ের দিকেই ইঙ্গিত করছে। ফলে CBI স্পষ্টভাবে আদালতে জানিয়েছিল—এই নৃশংস অপরাধের জন্য সঞ্জয়ের ফাঁসি হওয়া উচিত।
আজ রায়দানে কী বললেন বিচারপতি?
আজ ছিল একটি বড় দিন—গোটা বাংলা অপেক্ষা করছিল এই রায়ের জন্য। ১৬২ দিন পরে অবশেষে শিয়ালদা আদালত তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় বড় রায় দিল। সকাল থেকেই কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় শিয়ালদা কোর্ট চত্বর। পুলিশের নিরাপত্তা ছিল দৃঢ়, আর পুরো এলাকা ছিল সজাগ। রাস্তার মাঝেই ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছিল যাতে কোনভাবেই পরিস্থিতি অশান্ত না হয়।
দুপুর ১টা নাগাদ সঞ্জয় রায়কে পুলিশ ভ্যানে করে আদালতে আনা হয়। এরপর, দুপুর ২.৩০টে নাগাদ আদালত রায় দেয়। বিচারক অনির্বাণ দাস ধৃত সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করেন। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার তিনটি ধারায় সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ৬৪ নং ধারায় মৃত্যুর জন্য দায়ী, ৬৪ ধারায় ধর্ষণ এবং ১০৩ নং ধারায় খুনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। তবে সঞ্জয় এখনও তাঁর অপরাধের কথা অস্বীকার করছেন। আদালতে তিনি বারবার নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। কিন্তু এতদিনের তদন্ত এবং প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত তাঁর বিরুদ্ধে রায় দিল।
ফের আদালত চত্বরে হুংকার সঞ্জয়ের
আজ শিয়ালদা আদালতে সঞ্জয় রায় আবারও নিজের নির্দোষিতার দাবি করেন। তিনি বলেন, “আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে, আমি কিছু করিনি।” তবে তাঁর এই বক্তব্যের পর বিচারক অনির্বাণ দাস পাল্টা মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “CBI এতদিন তদন্ত করে যা প্রমাণ দিয়েছে, তাতে একমাত্র আপনি দোষী। তাই আপনাকে শাস্তি পেতেই হবে।”
এই মন্তব্যের পর সঞ্জয় নিজের বক্তব্যে আরও দাবি করেন, “দয়া করে আমার কথা শুনুন। আমি কিছু করিনি। আমাকে IPS-রা যা বলেছেন, তাই বলেছি। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমার গলায় রুদ্রাক্ষের মালা রয়েছে। আমি ধর্ষণ করলে সেটা ছিঁড়ল না কেন?” বিচারক তার মন্তব্যের পর জানিয়ে দেন, সঞ্জয়ের এই বক্তব্য আগামী সোমবার শুনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এতদিন ধরে চলা এই মামলার মাঝে এক প্রশ্ন বারবার উঠে আসছে—সঞ্জয় ছাড়া আর কেউ কি এই ঘটনার সাথে যুক্ত ছিল? এই প্রশ্ন এখনও নির্দিষ্ট উত্তর পাচ্ছে না। প্রথম থেকেই নির্যাতিতার পরিবার সুপ্রিম কোর্টে দাবি করে আসছিল, যে এই ঘটনায় আরও অনেকেই জড়িত। তবে CBI তদন্তে শুধুমাত্র সঞ্জয় রায়কেই অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আদালতও সঞ্জয়কেই দোষী সাব্যস্ত করেছে।
নির্যাতিতার পরিবার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিল, এই মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার পর যেন সঠিক রায় দেওয়া হয়। কিন্তু শিয়ালদা আদালত জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট কোনো স্থগিতাদেশ দেয়নি এবং ১১ নভেম্বর থেকে শুনানি শুরু হয়েছে। সেই থেকেই আজ পর্যন্ত মামলায় রায়দান করা হচ্ছে।