শীতের শুষ্ক ত্বকের জন্য কোন ক্রিম ভালো এটা নেয়া আমরা সবাই চিন্তার মধ্যে থাকি। শীত মানেই নানা ধরনের উৎসব আর বিয়ে পার্টি আনন্দের মুহূর্ত। এসব অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গেলে ত্বকের খেয়াল রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শীতকাল আসতেই আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে ত্বকেও কিছু পরিবর্তন আসে। বিশেষ করে শীতের শুষ্কতা ত্বককে খুব বেশি খারাপ প্রভাবিত করে। কিন্তু চিন্তার কোনো কারণ নেই! কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললে আপনার ত্বক থাকবে উজ্জ্বল আর সুস্থ।
Table of Contents
শীতের শুষ্ক ত্বকের জন্য কোন ক্রিম ভালো?
ত্বক আর্দ্র ও সুস্থ রাখতে ময়েশ্চারাইজ়ার একদম অপরিহার্য। ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে, সারা বছরই ময়েশ্চারাইজ়ার ব্যবহার করা উচিত, কিন্তু শীতের সময় এর প্রয়োজন আরও কিছুটা বাড়ে। শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বক আরও বেশি শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। তাই শীতে ময়েশ্চারাইজ়ার ব্যবহার করলে ত্বক আর্দ্র ও নরম থাকে। মেকআপ করুন বা সানস্ক্রিন মাখুন, তার আগে ময়েশ্চারাইজ়ার ব্যবহার করতেই হবে। কিন্তু আপানার ত্বকের জন্য কোনটি উপযুক্ত, তা বুঝবেন কী করে?
তৈলাক্ত ত্বক: যাদের ত্বক ওপর থেকে তেলতেলে ভাব, তাদের ত্বকের নীচের অংশে কিন্তু আর্দ্রতার অভাব থাকতে পারে। এর ফলে ত্বক শুষ্ক অনুভূত হতে পারে। তাই এই ধরনের ত্বকের জন্য লোশন বা হাইড্রেটিং জেল বেশ উপযুক্ত। ভিটামিন সি, সেরামাইড রয়েছে এমন ময়েশ্চারাইজ়ার বেছে নিতে পারেন।
শুষ্ক ত্বক: শুষ্ক ত্বককে আর্দ্রতা ধরে রাখতে একটু ঘন, ক্রিম জাতীয় ময়েশ্চারাইজ়ার বেশি কার্যকর। ভিটামিন সি, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড বা ফসফোলিপিড জাতীয় উপাদান থাকে, তবে আরও ভালো।
মিশ্র ত্বক: অনেকের ত্বক মিশ্র হতে পারে, যার মানে হলো নাক ও কপালের অংশ তৈলাক্ত আর বাকি মুখ শুষ্ক থাকে। এই ধরনের ত্বকের জন্য হায়ালুরোনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজ়ার ব্যবহার করা অনেক উপকারি। হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
কী ভাবে ব্যবহার করবেন?
শীতেও সুন্দর ত্বক কীভাবে? ত্বক ভাল রাখতে ময়েশ্চারাইজ়ারের পাশাপাশি সানস্ক্রিনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দিনের বেলা বাইরে যাওয়ার সময় ময়েশ্চারাইজ়ারের উপর সানস্ক্রিন লাগানো উচিত, যাতে সূর্যের তীব্র রশ্মি থেকে ত্বক সুরক্ষিত থাকে। আবার, আপনি এমন ময়েশ্চারাইজ়ারও বেছে নিতে পারেন যাতে এসপিএফ (স্পোর্টেক্টেড ফ্যাক্টর) যুক্ত থাকে।
শীতেও সুন্দর ত্বক কীভাবে?
১. ত্বক পরিষ্কার রাখুনঃ ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ত্বক পরিষ্কার রাখা। ধুলাবালি এবং দূষণ ত্বকের ওপর অনেক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। আর এসব থেকে ত্বককে রক্ষা করতে নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করা খুব জরুরি। বাতাসে ভেসে আসা দূষিত পদার্থগুলো ত্বকের জন্য অনেক ক্ষতিকর।
২. নিয়মিত সানস্ক্রিনঃ অনেকে হয়তো ভাবেন, শীতকালে তো সূর্যের দেখা মিলেই না, তাহলে সানস্ক্রিন কেন? কিন্তু আসলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির তাপমাত্রার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব সারা বছরই থাকে, তাই শীতকালেও বাইরে বের হওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি। এতে সূর্যের তীব্রতা থেকে রেহাই দিয়ে ত্বককে করবে মোলায়েম।
৩. সিরাম ব্যবহারঃ শীতকালে বাতাসে ভেসে আসা অতিক্ষুদ্র দূষিত কণা ত্বকের ভেতরে প্রবেশ করে এবং অক্সিডাইজ হয়ে কালচে ভাব তৈরি করতে পারে। এই কালচে ভাব ত্বকের উজ্জ্বলতা অনেকটা কমিয়ে দেয়। তাই শীতকালে সিরাম ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন সি–যুক্ত সিরাম ত্বকের সজীবতা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে।
৪. প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করুনঃ নামী ব্র্যান্ডের দামি পণ্যের চেয়ে প্রাকৃতিক তেল অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়। যেমন, নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল। এছাড়া গ্লিসারিন বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতেও ভুলবেন না।
৫. শরীরের যত্ন নিনঃ মুখমণ্ডলের যত্ন নেওয়া সবাই গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, কিন্তু শরীরের বাকি অংশের যত্ন অনেকেই ভুলে যান। শীতকালে শরীরের বাকি অংশও বাড়তি যত্ন দাবি করে। বছরের বাকি সময় সূর্যের আলো এবং তাপ পাওয়ার কারণে ত্বক কিছুটা সুরক্ষিত থাকে। কিন্তু শীতকালে শরীরের বাকি অংশ ভারী কাপড়ের নিচে ঢাকা থাকে। হাঁটু ও কনুইয়ের চামড়া ফেটে যাওয়া তো সাধারণ সমস্যা। তাই প্রতিদিন গোসলে বডিওয়াশ ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গোসলের পরপর ভেজা শরীরে তেল মালিশ করতে পারেন। এতে উপকার মিলবে সবচেয়ে বেশি।
৬. প্রচুর পানি খানঃ ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে পানি খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। শীতকালে ঠান্ডার কারণে অনেক সময় পানি খাওয়ার কমে যায়। কিন্তু নিয়মিত পানি না খেলে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। তাই শীতকালে ত্বককে সঠিকভাবে আর্দ্র রাখতে একটু বেশি পানি খাওয়ার প্রয়োজন। পানি ত্বককে ভেতর থেকে আর্দ্র রাখে এবং ত্বক উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর থাকে।