গর্ভাবস্থায় কাশি হলে কি করবেন?: প্রেগনেন্সিতে সব মহিলাদেরই একটু সাবধানে থাকতে হয়। এই সময় গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে নানা পরিবর্তন আসে। সেই সঙ্গে হরমোনের তারতম্য দেখা যায়। যে কারণে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ে। আর একবার সংক্রমণের ফাঁদে পড়লেই সন্তানের বড় ক্ষতি হতে পারে। তাই এই সময় নিজের এবং সন্তানের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে মহিলাদের কিছু হাইজিন মেনে চলতেই হবে। আজকের এই নিবন্ধে আমরা সেই বিষয়গুলো নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করেছি, যা গর্ভাবস্থায় হাইজিন বজায় রাখতে সহায়তা করবে।
সারাদিন নানা জিনিস ঘাটাঘাটি করলে হাতে জীবাণু থেকে যায়। আর তা থেকেই সংক্রমিত হতে পারেন গর্ভবতী মহিলারা। তাই খাওয়ার আগে অন্ততপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে প্রেগনেন্ট মহিলাদের। এমনকী বাথরুমে যাওয়ার পরেও প্রতিবার হাত সাবান দিয়ে ধোয়া উচিত। এছাড়া মুখে হাত দেওয়ার আগে সবসময়ই হাত ধুয়ে নেওয়া ভালো। তবেই নানাবিধ সংক্রমণ এড়িয়ে চলতে পারবেন হবু মায়েরা।
Table of Contents
গর্ভাবস্থায় সর্দির কারণ
প্রকৃতপক্ষে, ২০০-এর বেশি ধরনের ভাইরাস সাধারণ সর্দি-কাশির কারণ হতে পারে। গর্ভাবস্থায় বেশিরভাগ মায়েরাই অন্তত একবার এই ধরনের সর্দি-কাশির শিকার হন, কারণ এই সময়ে মায়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা দুর্বল হয়ে যায়। এর ফলে, সর্দি-কাশি অনেক সময় বেশ কয়েকদিন ধরে স্থায়ী হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে মায়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, যার ফলে তারা সহজেই নানা সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারেন। শীতকালে এই সমস্যাটি আরও বেড়ে যায়, কারণ শীতকালীন সর্দি-কাশি বেশ সাধারণ। বায়ুবাহিত সংক্রমণ যেমন হাঁচি-কাশির মাধ্যমে, গর্ভবতী মায়েরাও সহজেই সংক্রমিত হতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় সাধারন সর্দি কাশিতে কি গর্ভের বাচ্চার ক্ষতি হয়?
গর্ভাবস্থায় সাধারণ সর্দি-কাশি মায়ের জন্য অসুবিধার কারণ হলেও, এটি সাধারণত বাচ্চার জন্য খুব একটা ভয়ের বিষয় নয়। তবুও, এই সময় মায়ের সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হওয়া থেকে সুরক্ষিত থাকা উচিত। যদি ঠাণ্ডা লেগেই যায়, তবে তা দ্রুত নিরাময়ের ব্যবস্থা করা গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক যত্ন এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মায়ের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি সন্তানের সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করবে।
গর্ভাবস্থায় সর্দি হলে কি করবেন?
যদি ঠাণ্ডা লেগেই যায়, তবে মায়ের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া খুবই জরুরি। এর সঙ্গে সঙ্গে বেশি করে পানি পান করা এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। গর্ভাবস্থায় অনেক ওষুধ নিরাপদ নয়, তাই যেকোনো ধরনের ওষুধ গ্রহণের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
তবে অনেক সময় ঘরোয়া উপায়ে, যেমন গরম পানিতে লেবু বা মধু মিশিয়ে পান করা, ভাপ নেওয়া ইত্যাদি করেও সর্দি-কাশি নিরাময় সম্ভব। তাই, কিছু সহজ এবং নিরাপদ উপায়ে নিজের যত্ন নেওয়াটা মায়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ!
পরিষ্কার জামা-কাপড় পরতে হবে
গর্ভবতী মহিলাদের নিয়মিত কাচা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জামা-কাপড় পরা উচিত। নয়তো ময়লা জামা-কাপড় থেকেও সর্দি-কাশির মতো ছোট সংক্রমণ হতেই পারে। তাই রোজ জামা বদলে ফেলুন। তা অ্যান্টিসেপটিক এবং গরম জলেই কাচুন। এছাড়া এই সময় সুতির এবং ঢিলেঢালা পোশাকই পরুন। তাতেই আরাম পাবেন গর্ভবতী মহিলারা। (ছবি সৌজন্যে: Pexels)
গর্ভাবস্থায় এসব খাবার ভুলেও নয়
কাঁচা খাবার থেকেও পেটের সংক্রমণ হতে পারে গর্ভবতী মহিলাদের। তাই এই সময় কাঁচা মাংস, ডিম, সামুদ্রিক খাবার চিজ বা কাঁচা দুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্যথায় পেট ব্যথা হতে পারে। এছাড়া পেটের সংক্রমণের কারণে জ্বর, বমি এবং ডায়ারিয়াও হতে পারে। যা মা এবং সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো নয়। তাই খাবার ভালো করে রান্না করে তবেই খান। (ছবি সৌজন্যে: Pexels)
গর্ভাবস্থায় বেশি করে জলপান করুন
পর্যাপ্ত পরিমাণে জলপান করলে শরীর থেকে সমস্ত টক্সিন দূর হয়ে যায়। ফলে শরীর থাকে সুস্থ-সবল। কোষ্ঠকাঠিন্যের জ্বালা থেকে মুক্তি মেলে এবং ব্লাডার ইনফেকশনের ঝুঁকিও কমে। এছাড়া আপনার এবং সন্তানের বিকাশের জন্য় রোজ পর্যাপ্ত পরিমাণে জলপান অত্যন্ত জরুরি।
তাই নিজের ও সন্তানের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে প্রত্যেক গর্ভবতী মহিলাদের অন্ততপক্ষে দিনে ৩-৪ লিটার জলপান করতেই হবে। এছাড়াও এই সময় ক্যাফাইন, অ্য়ালকোহল বা মিষ্টি জাতীয় পানীয় বেশি না খাওয়াই ভালো। তবেই প্রেগনেন্সিতে মা ও সন্তান থাকবে একেবারে সুস্থ।
গর্ভাবস্থায় সর্দি কাশি প্রতিরোধে কি করবেন?
পুরোপুরি ভাবে সর্দি প্রতিরোধ করা হয়তোবা সম্ভব না। তবে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করে আপনি এর ঝুঁকি কমাতে পারেন-
যেমন, কাশি বা সর্দিতে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে কমপক্ষে তিন ফুট দূরে থাকুন। কারণ, এই সময়ে জীবাণুগুলো বাতাসে ভাসমান থাকে। যদি একটি জীবাণু আপনার চোখে কিংবা নাকে এসে পড়ে, তাহলে কয়েক দিনের মধ্যে আপনি কাশি বা সর্দিতে আক্রান্ত হতে পারেন।
আপনার হাত নিয়মিত ধোয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঠাণ্ডা সাধারণত ছড়ায় পরোক্ষ শারীরিক সংস্পর্শের মাধ্যমে। অর্থাৎ, একজন অসুস্থ ব্যক্তির নাক থেকে জীবাণু আপনার হাতে চলে আসতে পারে। যখন আপনি সেই হাত দিয়ে কোনো বস্তু স্পর্শ করেন, তখন জীবাণু সেই বস্তুর ওপরও লেগে যেতে পারে। মনে রাখবেন, ঠাণ্ডার জীবাণু জড়বস্তুতে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
তাহলে, সঠিকভাবে হাত ধোয়া নিশ্চিত করুন—বিশেষ করে বাইরে থেকে আসার পর, খাবার খাওয়ার আগে এবং মাস্ক না পরার সময়। হাত ধোয়া আপনার এবং আপনার পরিবারের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই কার্যকরী
গর্ভাবস্থার শেষ ৩ মাসের সতর্কতা
গর্ভাবস্থার শেষ ৩ মাসকে থার্ড ট্রাইমেস্টার বা তৃতীয় ত্রৈমাসিক কাল বলা হয়, যা মা ও সন্তানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে একজন গর্ভবতী মায়ের খাবারের তালিকা কেমন হওয়া উচিত, তা জানা প্রয়োজন। তাই চলুন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডা. ইশরাত জেরিনের কাছ থেকে সঠিক পরামর্শ জেনে নিই।
ডা. ইশরাত জেরিন জানান, রক্ত জমাট বাঁধার জন্য ভিটামিন কে অত্যন্ত জরুরি, বিশেষ করে প্রসবের পর এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাই, থার্ড ট্রাইমেস্টারে মায়েদের ভিটামিন কে সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত, যেন সন্তান জন্মদানের সময় কোনো ভিটামিনের ঘাটতি না হয়। ভিটামিন কে মায়ের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকলে প্রসবকালীন সময় আরও সmooth ও নিরাপদ হতে পারে।
ঠিক যেমন ফার্স্ট এবং সেকেন্ড ট্রাইমেস্টারে আয়রন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি থার্ড ট্রাইমেস্টারেও আয়রন অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান হিসেবে কাজ করে রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে। যদি আপনার শরীরে আয়রনের ঘাটতি থাকে তবে সময়ের আগেই প্রসব হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই, এই সময়টাতে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া এবং আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে আপনি ও আপনার সন্তান উভয়েই সুস্থ থাকেন।
গর্ভাবস্থার শেষ ৩ মাসে শিশুর ওজন দ্রুত বাড়তে থাকে, তাই এই সময়ে মায়ের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফার্স্ট ও সেকেন্ড ট্রাইমেস্টারের তুলনায় থার্ড ট্রাইমেস্টারে ক্যালরির চাহিদাও কিছুটা বেশি থাকে। এজন্য এ সময় অন্তত ৪০০ ক্যালরি অতিরিক্ত গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়, যা মা এবং শিশুর সুস্থ বিকাশে সহায়ক হবে।
এই সময় চর্বিযুক্ত এবং দ্রুত ওজন বাড়ায় এমন খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো। ডাক্তাররা মা ও শিশুর ওজনের ওপর ভিত্তি করে ডায়েটের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যদি দেখা যায় যে শিশুর ওজন প্রয়োজনের চেয়ে কম, তাহলে ডাক্তার সাধারণত প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খেতে বলেন। তাই, আপনার এবং শিশুর সুস্থতার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join JKNEWS24 Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join NEWS24 |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |