জ্বরের সঙ্গে শরীর ব্যথা হওয়ার কারণ: জ্বর এখন অনেকের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে যখন ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা প্রভৃতি। বর্তমানে সাধারণ ভাইরাস জ্বরেও তাপমাত্রা ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে। যা কারনে অনেককেই চিন্তািত করে তোলে। তবে মনে রাখা জরুরি, জ্বর হলে প্রথমেই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বেশিরভাগ জ্বরই ভাইরাসজনিত। সঠিক সময় উপযুক্ত চিকিৎসা নেওয়া হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি ঠিক হয়ে যায়।
ভাইরাস জ্বর সাধারণত প্রথম দিকে তীব্র এবং কষ্টকর হলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দ্রুত ভালো হয়ে যায়। তবে, যদি জ্বর অনেক দিন ধরে থাকে, তীব্রতা বেশি না হলেও সহজে চলে না। তাহলে তার কারণ খুঁজে বের করতে কিছুটা সময় লাগে। এমন জ্বর সারতেও সময় নেয়। অনেক সময় এই ধরনের জ্বরের সঙ্গে শরীরের অন্যান্য অংশে ব্যথা, যেমন গিঁট ও পেশিতে ব্যথা আরও কষ্টকর হতে পারে।
জ্বরের সঙ্গে শরীর ব্যথা হওয়ার কারণ!
কোন জ্বরে কেমন ব্যথা
চিকুনগুনিয়া জ্বরের অন্যতম পরিচিত উপসর্গ হলো গিঁটে ব্যথা। হাঁটু, কোমর এবং বড় গিঁটে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় জ্বরের চেয়ে এই ব্যথাই অনেক বেশি কষ্ট দেয়। এর ফলে কিছু মানুষ ব্যথার কারণে হাঁটতেও পারেন না। তারা অনেক সময় বাঁকা হয়ে হাঁটেন। এছাড়া, জ্বর সেরে যাওয়ার পরও এই ব্যথা কিছু দিন থাকতে পারে। এবং কিছু ক্ষেত্রে জয়েন্টে ব্যথা কয়েক সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় থাকতে পারে।
ডেঙ্গুতে সাধারণত গিঁটে ব্যথা হয় না, তবে পুরো শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়। বিশেষ করে মেরুদণ্ড ও কোমরেও প্রচুর ব্যথা হয়। যার কারণে ডেঙ্গুকে “ব্যাকবোন ফিভার” বলা হয়। এত বেশি ব্যথা হয় যে, অনেকের মনে হয় যেন কোমর ভেঙে যাচ্ছে। তবে চিন্তার কিছু নেই কারণ সাধারণত ডেঙ্গু সাত থেকে আট দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। এবং জ্বরের সঙ্গে থাকা এই ব্যথাও সেরে যায়। তবে এই সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও চিকিৎসা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
সব খবর
শরীরের নানা অংশে তীব্র ব্যথার পাশাপাশি এ দুই সংক্রমণেই শরীর খুব দুর্বল লাগে। কোনো কাজ করতে ইচ্ছা করে না। মাথাঘোরা, ক্লান্তি ও অবসাদ লাগে।
জ্বরের সঙ্গে শরীর ব্যথা হওয়ার কারণও করণীয় কী
ভাইরাস সংক্রমণ থেকে সেরে উঠতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দিনে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম অপরিহার্য। কারণ ঘুম কম হলে ক্লান্তি ও শরীরে ব্যথা-যন্ত্রণা বাড়ে।
জ্বরে শরীরে প্রচুর ঘাম হয়, যার ফলে শরীরে পানির ঘাটতি হতে পারে এবং শরীর ডিহাইড্রেট হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় ব্যথার তীব্রতা আরও বাড়ে। তাই, যে কারণেই জ্বর হোক না কেন, অন্যান্য সময়ের তুলনায় এক থেকে দেড় লিটার বেশি পানি খাওয়া প্রয়োজন। শরীর থেকে যত বেশি টক্সিন বের করে দেওয়া যাবে। ততই ব্যথা কমে আসবে।
হালকা ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজও ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে, যদি ব্যথার তীব্রতা বেশি হয়, প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু ব্যথানাশক ওষুধ, যেমন এনএসএআইডি (NSAID), বিপজ্জনক হতে পারে।
প্রতিদিন বিকালে বিকালে জ্বর ও মাথা ব্যথার কারণ?
প্রতিদিন বিকালে জ্বর ও মাথা ব্যথার মতো সমস্যা বেশ কয়েকটি কারণে হতে পারে। সম্ভাব্য কারণগুলো হলো:
- ইনফেকশন: টিবি বা ম্যালেরিয়ার মতো ইনফেকশন নিয়মিত জ্বরের কারণ হতে পারে।
- ক্রনিক ফ্যাটিগ সিন্ড্রোম: দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তির সাথে অন্যান্য উপসর্গের সমন্বয়।
- ডিহাইড্রেশন: শরীরে পানির অভাব থেকে মাথা ব্যথা ও জ্বর হতে পারে।
- অটোইমিউন রোগ: শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অসামঞ্জস্য এ ধরনের উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে।
- হরমোনাল ইম্ব্যালেন্স: হরমোনের সমস্যা অনেক সময় জ্বর এবং মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
- স্ট্রেস ও অ্যানজাইটি: মানসিক চাপ ও উদ্বেগ শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
- এলার্জি বা এস্থমা: এগুলোর কারণে শরীরে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।
-
জ্বরের সাথে কেন শরীর ব্যথা হয়?
জ্বরে শরীরে অনেক ঘাম হয়। তাই পানির ঘাটতি হয়। শরীর ডিহাইড্রেট হয়ে পড়ে। এতে শরীরে ব্যথার তীব্রতা বাড়ে।
-
জ্বর এবং শরীর ব্যথা হলে কি ওষুধ খেতে হবে?প্যারাসিটামল হলো এমন এক সাধারণ ও সহজলভ্য ওষুধ, যা আমরা প্রায়ই জ্বর কমাতে বা শরীরের ব্যথা উপশম করতে ব্যবহার করি। এটি একই সঙ্গে ব্যথা নাশক (Analgesic) এবং জ্বর নাশক (Antipyretic) হিসেবে কাজ করে। জলে সহজেই দ্রবীভূত হয় বলে এটি শরীরে দ্রুত কাজ শুরু করতে পারে। এর আরেক নাম অ্যাসিটামিনোফেন (Acetaminophen)। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, প্যারাসিটামল প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৮৭৭ সালে (মতান্তরে ১৮৫২ সালে)। আজকের দিনে এটি সারা বিশ্বে বহুল ব্যবহৃত নিরাপদ ওষুধগুলোর একটি।
-
জ্বর ও শরীর ব্যথার ট্যাবলেটের নাম কি?
প্যারাসিটামল, যাকে অ্যাসিটামিনোফেনও বলা হয়, হলো এমন একটি বহুল ব্যবহৃত ওষুধ যা মূলত ব্যথা উপশম (বেদনানাশক) এবং জ্বর কমাতে (অ্যান্টিপাইরেটিক) কাজে লাগে। এটি বাজারে সহজলভ্য এবং ডাক্তারি প্রেসক্রিপশন ছাড়াও সাধারণত ফার্মেসিতে পাওয়া যায়। এর কার্যকারিতা ভালো এবং নির্দিষ্ট মাত্রায় সেবন করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই সামান্য হয়। তাই মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা বা সাধারণ জ্বরের সময় অনেকেই প্যারাসিটামল ব্যবহার করে থাকেন।
-
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে?ডেঙ্গু হলে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার যেমন ডাবের পানি, ফলের রস ও খাবার স্যালাইন খেতে হবে। প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন সি, ফলিক অ্যাসিড ও জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ, মুরগি, ডিম, পেঁপে, পেয়ারা, কমলা ও সবুজ শাকসবজি গ্রহণ করা উচিত।




