লক্ষ্মীর ভান্ডার থেকে স্বাস্থ্য সুবিধা: এই বছর কালীপুজোর উৎসব শেষ হতে না হতেই রাজ্যের ৬টি জেলায় উপনির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন হয়। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে বিনা ঝঞ্ঝাটে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস দুর্দান্ত ফলাফল করে। দলের এই সাফল্যে স্বাভাবিকভাবেই খুশির হাওয়া বইছে শাসক শিবিরে। তবে তৃণমূলের পরবর্তী লক্ষ্য অনেক বড়—২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন। আর তাই সময় নষ্ট না করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই সেই লক্ষ্য পূরণের প্রস্তুতিতে নেমে পড়েছেন। দলে সংগঠন মজবুত করা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে আরও নিবিড় যোগাযোগ স্থাপনে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
সূত্রের খবর, গত সোমবার বিধানসভা বৈঠক শেষে গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন পূর্ত ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী পুলক রায় এবং তাঁর দফতরের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, কৃষি মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবং সেচ ও জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, রাজ্যের কাজের অগ্রগতি এবং উন্নয়নের প্রকল্পগুলির উপর নিয়মিত নজরদারি রাখতে এখন থেকে প্রতি সোমবার মন্ত্রী এবং আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক হবে। মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বার্তা, সরকারের একমাত্র লক্ষ্য এখন ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন। উন্নয়নের কাজ যাতে দ্রুত ও কার্যকরভাবে সম্পন্ন হয়, তা নিশ্চিত করতেই এই নিয়মিত বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষ নজর দিচ্ছেন সেই সব দফতরের ওপর, যেগুলি রাজ্যের সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে, পূর্ত দফতর, কৃষি দফতর, পঞ্চায়েত দফতর এবং পরিবহন দফতর—এই সব দফতরের কাজের অগ্রগতি এবার সরকারের অন্যতম প্রধান ফোকাস।
জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলো নিয়েও নতুন করে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। “লক্ষ্মীর ভান্ডার”-এর মতো জনপ্রিয় প্রকল্পগুলোকে আরও কার্যকর ও আকর্ষণীয় করার চেষ্টা চলছে। তবে, এই প্রকল্পগুলো আগের মতোই নির্বাচনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
অন্যদিকে, সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে রয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। এই গুরুত্বপূর্ণ দফতরের দায়িত্ব ২০১১ সাল থেকে নিজেই সামলাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে গত আগস্টে আরজি কর হাসপাতালের ঘটনায় রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর বিরোধীরা তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। ডাক্তার, রোগী এবং নার্সদের নিরাপত্তা নিয়েও উঠেছিল প্রশ্ন।
তবে এখন সেই প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থাকে বদলে দিতে প্রস্তুত মুখ্যমন্ত্রী। সামনেই বিধানসভা নির্বাচন, আর তার আগেই স্বাস্থ্য দফতরের কার্যকলাপকে সম্পূর্ণ নতুন রূপে আনতে বদ্ধপরিকর তিনি। নবান্ন সূত্রে ইঙ্গিত মিলছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে স্বাস্থ্য দফতরের পুরো চিত্র বদলানোর পরিকল্পনা চলছে। প্রয়োজনে প্রশাসন এবং মন্ত্রিসভার কাঠামোতেও রদবদল করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী।