বলিউডে ফ্লপঃ ভাগ্য বদলাতে বাংলাদেশে এসে সুপারস্টার হলেন তিনি! চলচ্চিত্র জগতে সুপারস্টার হওয়া এক কঠিন যাত্রা। এই যাত্রায় সাফল্য পেতে শুধু কঠোর পরিশ্রমই নয়, সঠিক সুযোগও প্রয়োজন। বলিউডে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং। তার মধ্যেই ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের অনেক তারকা ভালো সুযোগের খোঁজে বলিউড ছেড়ে দেশের বাইরে পাড়ি জমিয়েছেন, তবে সফল হয়েছেন খুব কম। ইরফান খান ও প্রিয়াঙ্কা চোপড়া হলিউডে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পেরেছেন।
বলিউডের অনেক অভিনেতাই নিজেদের ভাগ্য পরীক্ষা করতে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন, তবে চাঙ্কি পান্ডে ঠিক উল্টো পথে হেঁটেছিলেন। তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন বাংলাদেশে, এবং সেখানে এসে হয়ে উঠেছিলেন এক বড় তারকা। তার মেয়ে অনন্যা পান্ডে এখন বলিউডের পরিচিত অভিনেত্রী। চাঙ্কি পান্ডে ১৯৬২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পারিবারিক নাম ছিল সুয়াশ পান্ডে। তার বাবা শারদ পান্ডে ছিলেন বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, আর মা স্নেহলতা পান্ডে ছিলেন চিকিৎসক। চাঙ্কি নিজেও প্রথমে চিকিৎসক হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সেই পথে সফল হতে পারেননি।
১৯৮০-র দশকের শেষদিকটা বলিউডে রোমান্টিক হিরোদের জন্য এক বিশেষ যুগ ছিল, আর এই সময়েই চাঙ্কি পান্ডে আত্মপ্রকাশ করেন। নিজের মনোমুগ্ধকর অভিনয় ও ব্যক্তিত্ব দিয়ে তিনি খুব দ্রুত দেশজুড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। চাঙ্কির অভিনীত ছবির তালিকায় রয়েছে ‘তেজাব’, ‘জহরিলে’, ‘বিশ্বাত্মা’, এবং ‘আঁখে’-র মতো দারুণ হিট চলচ্চিত্র। তিনি শুধু প্রধান চরিত্রেই নয়, পার্শ্বচরিত্রেও দর্শকদের মন জয় করেছেন। ১৯৮৭ সালে তার বলিউড যাত্রা শুরু হয় তারকাবহুল ছবি ‘আগ হি আগ’ দিয়ে, যেখানে তিনি নীলম কোঠারির সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছিলেন। এরপর ১৯৮৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পাপ কি দুনিয়া’ ছবিতেও তিনি নজরকাড়া অভিনয় করেন, যা বাণিজ্যিক ভাবে বেশ সফল হয়েছিল। তার অভিনয় দক্ষতা এবং অনবদ্য চরিত্রাভিনয়ের জন্য চাঙ্কি পান্ডে সেই সময়ের অন্যতম আলোচিত অভিনেতা হয়ে ওঠেন।
১৯৯৩ সালে চাঙ্কি পান্ডের ক্যারিয়ারে এক বড় মাইলফলক ছিল ডেভিড ধাওয়ানের পরিচালিত ‘আঁখে’ সিনেমা। এই ছবিতে গোবিন্দার সঙ্গে তার জুটি দর্শকদের মন জয় করে নেয়। ছবিটি সেই সময়ের সবচেয়ে বড় ব্লকবাস্টারগুলোর একটি হিসেবে পরিচিতি পায়। তবে, যদিও ‘আঁখে’-র সাফল্যে চাঙ্কির অবদান কম ছিল না, বেশিরভাগ প্রশংসা শেষমেশ গিয়ে জমা হয় গোবিন্দার ঝুলিতেই।
বলিউডে ভালো কাজ না পাওয়ার হতাশা থেকে চাঙ্কি পান্ডে একসময় কিছুদিনের জন্য সিনেমা থেকে বিরতি নেন। এই সময়ই তিনি নতুন এক দিগন্তের খোঁজে পাড়ি জমান বাংলাদেশে এবং ঢালিউডে কাজ শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি ঢাকাই ছবিতে শীর্ষস্থানীয় অ্যাকশন তারকা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
কয়েক বছরের মধ্যেই চাঙ্কি পান্ডে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় তারকা হয়ে ওঠেন। তার জনপ্রিয়তা এতটাই বেড়ে যায় যে তাকে ‘বাংলাদেশের শাহরুখ খান’ বলে ডাকা শুরু হয়।
২০১৮ সালের এক সাক্ষাৎকারে তিনি তার ঢালিউড যাত্রার স্মৃতিচারণ করেছিলেন। চাঙ্কি বলেছিলেন, “বলিউডে আমি যেরকম কাজ চাইছিলাম, সেটা পাচ্ছিলাম না। এক বন্ধু আমাকে বাংলাদেশের একটি ছবিতে অভিনয়ের জন্য প্রায় জোর করেই রাজি করায়। পারিশ্রমিক ভালো ছিল, আর তখন টাকারও খুব দরকার ছিল। তাই প্রস্তাবটি গ্রহণ করি।” এই সিদ্ধান্তই তার ক্যারিয়ারের নতুন মোড় এনে দিয়েছিল।
চাঙ্কি পান্ডে তার বাংলাদেশ অধ্যায় নিয়ে বলেন, “বড় ঝুঁকিই নিয়েছিলাম আমি। কিন্তু আমার প্রথম সিনেমাটি এত বড় হিট হয়ে গেল যে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। পাঁচ বছর বাংলাদেশে কাজ করেছি। এরপর ১৯৯৮ সালে বিয়ে করে দেশে ফিরি।”
বাংলাদেশে চাঙ্কির ক্যারিয়ার শুরুর নেপথ্যে ছিলেন জনপ্রিয় বাঙালি অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। চাঙ্কি এক সাক্ষাৎকারে জানান, পরিচালক পার্থ ঘোষের ‘তিসরা কৌন?’ (১৯৯৪) ছবির সেটে ঋতুপর্ণার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর ঋতুপর্ণাই তাকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে কাজ করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেন।
বাংলাদেশে চাঙ্কির প্রথম দিককার ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ‘স্বামী কেন আসামী’ (১৯৯৭), যেখানে তিনি ঋতুপর্ণার সঙ্গে অভিনয় করেন। চাঙ্কি বলেন, “১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত আমি সেখানে ছিলাম—খুব ভালো সময় কাটিয়েছি। ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসাতেও কিছুটা জড়িত হয়েছিলাম। প্রথম ছবিতে বাংলায় কথা বলেছিলাম, তবে পরে আমার সংলাপ ডাব করাই।”
বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ বছরের ক্যারিয়ারে চাঙ্কি ছয়টি সফল ছবিতে নায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন। তার উল্লেখযোগ্য ঢাকাই ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘স্বামী কেন আসামী’, ‘মেয়েরাও মানুষ’, ‘ফুল আর পাথর’ (যৌথ প্রযোজনা), এবং ‘প্রেম করেছি বেশ করেছি’। তিনি দ্রুত বাংলাদেশের শীর্ষ তারকাদের মধ্যে নিজের জায়গা করে নেন এবং দর্শকদের হৃদয়ে আলাদা স্থান দখল করেন।
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join JKNEWS24 Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join NEWS24 |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |