গরম পড়তেই পেটের সমস্যা যেন লেগেই থাকে—গ্যাস, অম্বল, ঢেকুর… একটুখানি ভারী খাবার খেলেই পেটটা যেন ধরা পড়ে যায়! তার ওপর যদি তেল-মশলায় ভরা কিছু খাওয়া হয়, তাহলে তো আর রক্ষা নেই—বদহজম একপ্রকার নিশ্চিত। আর তখনই অনেকেই হাত বাড়ান অ্যান্টাসিডের দিকে। কিন্তু সত্যিই কি রোজ রোজ মুঠো মুঠো ওষুধ খাওয়াটা ঠিক? একেবারেই না।
গরমে অম্বল আর চোঁয়া ঢেকুর
বরং কিছু সাধারণ ঘরোয়া নিয়ম মেনে চললেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যেমন, প্রতিদিন সকালে একবার করে খেতে পারেন আদা-হলুদের শট। হ্যাঁ, এই ছোট্ট পানীয়টি শুধু পেট ঠান্ডা রাখে না, হজমও মসৃণ করে আর শরীর থেকে টক্সিনও বের করে দেয়।তবে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে—অম্বল কমানোর জন্য এই ডিটক্স শটটা কিন্তু খেতে হবে বিশেষ নিয়মে। না হলে ফলটা উলটোও হতে পারে।
সব মানুষের খাবারের পছন্দ এক নয়। কেউ পাতে হালকা রান্না চান, তো কেউ আবার একটু রসালো, ঝাল-মশলাদার খাবার ছাড়া খেতেই পারেন না। তবে আপনি যা-ই খান না কেন, আমাদের শরীরে একটা জিনিস কিন্তু সবসময়ই কাজ করে—তা হল হজমের জন্য পাকস্থলীতে নিরন্তর অ্যাসিড নিঃসরণ।
এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু যদি দীর্ঘক্ষণ পেটে কিছু না থাকে বা অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া হয়, তখন এই অ্যাসিডের ক্ষরণ বেড়ে যায়। তখনই শুরু হয় জ্বালা, অস্বস্তি আর ঢেকুর—মনে হয় গলা দিয়ে যেন অম্লরস উঠে আসছে!
এই সমস্যাটিকেই ডাক্তাররা বলেন ‘অ্যাসিড রিফ্লাক্স’। যাঁরা এই সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের অনেক সময় খালি পেটে কিংবা খাওয়ার পরেই ওষুধ খেতে হয়। তবে একটা ভালো খবর আছে—সব সময় ওষুধের উপর নির্ভর না করেও কিন্তু এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। কী ভাবে? একটু নিয়ম মানলেই অ্যাসিড রিফ্লাক্সকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। চলুন, জেনে নেওয়া যাক সেই সহজ উপায়গুলো ঠিক কী কী।
হজমের জন্য
১/৪ কাপ আদা কুচি, আধ কাপের মতো কাঁচা হলুদ বেটে নিতে হবে। তার সঙ্গে মেশাতে হবে আধ কাপের মতো পাতিলেবুর রস। এই মিশ্রণে এক কাপ জল মিশিয়ে একটু পাতলা করে নিতে হবে। তার পর দিতে হবে ১ চা চামচ মধু ও এক চিমটে গোলমরিচের গুঁড়ো। সমস্ত উপকরণ মিশে গেলে তা ফ্রিজে রেখে দিন প্রতি দিন ৩০-৫০ মিলিলিটার বা তিন থেকে চার চামচ এই পানীয় খেলে অম্বলের সমস্যা দূর হবে। ভারী কিছু খাওয়ার পরে নরম পানীয়ের বদলে এই শট খেলে উপকার পেতে পারেন।
অ্যাসিড রিফ্লাক্স কমাতে
অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে, ওষুধের উপর ভরসা না করে একবার ট্রাই করে দেখতে পারেন এই ঘরোয়া হজম-সহায়ক শট। তৈরি করাও খুব সহজ।
প্রথমে ১/৪ কাপ আদার কুচি আর ১/৪ কাপ কাঁচা হলুদ একসঙ্গে নিয়ে মসৃণ করে বেটে নিন। এবার এই মিশ্রণে আধ চামচ করে পাতিলেবুর রস, কমলার রস আর গোলমরিচের গুঁড়ো মেশান। সব উপকরণ ভালো করে ব্লেন্ড করে নিয়ে তাতে দিন এক কাপ জল।
আর চাইলে স্বাদ বাড়ানোর জন্য এক চামচ মধুও মিশিয়ে নিতে পারেন। ব্যস! তৈরি হয়ে গেল আপনার অম্বল-হজম-বদহজম রুখে দেওয়া শক্তিশালী ডিটক্স শট।
এই পানীয়টি রোজ সকালে খালি পেটে আর বিকেলে একবার খেলেই দেখবেন—অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। পেট থাকবে হালকা, মন থাকবে ফুরফুরে!
গ্রিন ডিটক্স শট
পেট ঠিক না থাকলে মনটাও কেমন গুমোট হয়ে যায়, তাই না? গরমে তো আবার গ্যাস-অম্বল, বদহজমের সমস্যা লেগেই থাকে। তাই রোজকার রুটিনে যদি একটু স্বাস্থ্যকর পানীয় জায়গা করে নিতে পারে, তাহলে শরীর যেমন হালকা লাগবে, তেমন মনও থাকবে ফুরফুরে।
চলুন, চটপট জেনে নিই কীভাবে বানাবেন এই গ্রিন ডিটক্স শট, যা রোজ আধ কাপ করে খেলে পেট থাকবে ঠিকঠাক আর শরীরও হবে ডিটক্স।
👉 প্রথমে নিন আধ কাপ আদা কুচি, আধ কাপ কাঁচা হলুদ কুচি আর আধ কাপ শশার টুকরো।
👉 এই তিনটি উপকরণ ভালো করে ব্লেন্ডারে পেস্ট করে নিন।
👉 এবার এর সঙ্গে মেশান আধ চা চামচ লেবুর রস, ১ চামচ অ্যাপল সাইডার ভিনিগার, আধ চামচ গোলমরিচ গুঁড়ো আর ১ চা চামচ মধু।
সবকিছু মিশিয়ে একটা কাচের বোতলে রেখে দিন ফ্রিজে। রোজ সকালে বা বিকেলে আধ কাপ করে এই শট খেলেই দেখবেন—অম্বল, গ্যাস, হজমের সমস্যা একেবারে গুডবাই!