আপনি কি ভাবে বছরের পর বছর কিভাবে কাপড় ভালো রাখবেন। পুরোনো জামদানি শাড়ি তুলে রেখে দিয়েছেন আলমারিতে। হঠাৎ বন্ধুর বিয়েতে মন চাইল সেই শাড়িটা পরবেন। কিন্তু আলমারি থেকে শাড়িটা বের করতেই আপনার চক্ষু ছানাবড়া, শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে ফেঁসে গেছে। এখন কী করবেন? পুরোনো কিংবা তুলে রাখা কাপড় দীর্ঘদিন ব্যবহার না করলে ফাঙ্গাস পড়ে যেতে পারে, গন্ধ হয়ে হতে পারে ব্যবহারের অনুপযোগী। কীভাবে এসব ব্যবহারোপযোগী করে তুলবেন, তা নিয়ে ভাবছেন? সে সমাধানও আছে।
Table of Contents
কাপড় ভালো রাখার সেরা টিপস
কাপড়কে সাদা ও ঝলমলে রাখতে বিশেষ কোন দামী জিনিসের প্রয়োজন পড়ে না। বরং কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে হয়। কাপড় দীর্ঘদিন সুন্দর ও পরিপাটি রাখতে হলে আপনাকে কাপড়ের যত্ন নিন।
গরম পানিতে দিয়ে কাপড় ধোয়া
অনেকে মনে করেন যে গরম পানিতে কাপড় ধুলে কাপড়ের রং ফিকে হয়ে যায় বা কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু, শুধু ঠাণ্ডা পানি দিয়ে সবসময় কাপড় ধোয়া কাপড়ের জন্য ভাল নাও হতে পারে। ঠাণ্ডা পানি অনেক সময় কাপড়ের ময়লা বা দুর্গন্ধ পুরোপুরি দূর করতে পারে না। তাই, কাপড়ের ধরনের উপর নির্ভর করে কখনো কখনো গরম পানিও প্রয়োজন হতে পারে, বিশেষ করে যদি কাপড়টা খুব ময়লা হয় বা দুর্গন্ধ থাকে।
গরম পানিতে কাপড় ধোয়া কি ঠিক?
গরম পানিতে ওয়াশিং পাউডার মিশিয়ে কাপড় ভিজিয়ে রাখলে কাপড়ের জেদি কালো দাগ আর দুর্গন্ধ দূর হয় সহজেই। মোজা, স্কুল-কলেজের ড্রেস, অফিসের পোশাক – এসব তো প্রায়ই বেশি ময়লা হয়। গরম পানিতে এই ধরনের কাপড় কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে ময়লাগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার হয়, আর দুর্গন্ধও চলে যায়। ফলে কাপড় শুধু পরিষ্কারই হয় না, বরং এক ধরনের তরতাজা, ফ্রেশ গন্ধও আসে।
ঘামের কারণে অনেক ধরনের জীবাণু কাপড়ে লেগে থাকে, যা থেকে দুর্গন্ধ ও বিভিন্ন রোগজীবাণু তৈরি হতে পারে। তবে গরম পানিতে ওয়াশিং পাউডার মিশিয়ে কাপড় ধুলে এই জীবাণুগুলো সহজেই দূর করা যায়। এর ফলে কাপড় যেমন পরিষ্কার হয়, তেমনি জীবাণুমুক্তও থাকে, যা স্বাস্থ্যকর এবং সুরক্ষিত।
পুরাতন কাপড় ধোয়ার নিয়ম
পুরাতন কাপড় নতুন করার উপায়, খুব ঘন ঘন কাপড় ধুলে এর সুতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর এতে কাপড়ের আয়ু কমে যেতে পারে। যত বেশি আপনি জামাকাপড় ধুবেন, তত তাড়াতাড়ি সেগুলো জীর্ণ হয়ে যাবে। শুধু রঙ ফিকে হয়ে যায় না, কাপড়ের ইলাস্টিসিটিও নষ্ট হতে শুরু করবে। তাই, কাপড় যদি দৃশ্যমানভাবে খুব নোংরা না হয় বা তীব্র দুর্গন্ধ না থাকে, তবে অন্তত ৩ বার পরার পর লন্ড্রিতে দিন। তবে যদি গন্ধ আসে বা দাগ লাগে, তখনই ধোয়া ভালো।
জামাকাপড় পরিষ্কার রাখার জন্য ধোয়া ছাড়াও বেশ কিছু সহজ উপায় আছে। যেমন, কোনো দাগ লাগলে পুরো কাপড় না ধুয়ে শুধু যেখানে দাগ পড়েছে সেই অংশটি পরিষ্কার করুণ। কাপড় যদি নেতানো বা স্পঞ্জি মনে হয় তাহলে বাইরে বাতাসে বা রোদে কিছুক্ষণ ঝুলিয়ে রাখুন। আর যদি দুর্গন্ধ হয়, তাহলে সারারাত ফ্রিজে রেখে দিন—এতে কাপড় ফ্রেশ হয়ে যাবে। এসব পদ্ধতি শুধু আপনার জামাকাপড়কে দীর্ঘস্থায়ী করবে।
কাপড়ের নরমভাব ধরে রাখতে এবং রঙ বিবর্ণ হওয়া ঠেকাতে, একটি মৃদু ডিটারজেন্ট দিয়ে কম তাপমাত্রায় কাপড় ধুতে পারেন। তবে, এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখতে হবে—যে কাপড়গুলো আপনার ত্বকের সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শে আসে, বিশেষ করে অন্তর্বাস ও মোজা, সেগুলো অবশ্যই পর্যাপ্ত তাপে ধুয়ে নেওয়া উচিত, যাতে জীবাণু ভালোভাবে দূর হয় এবং স্বাস্থ্যকর থাকে।
ব্লিচিং পাউডার দিয়ে কাপড় ধোয়ার নিয়ম
সাদা কাপড়ে কোনো দাগ পড়লে ব্লিচ ব্যবহার করে সেই দাগ তুলতে পারেন। তবে ব্লিচ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কিছু কাপড়ে ব্লিচ দিলে দাগ সহজেই উঠে যায়, আবার কিছু কাপড় ব্লিচে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা ছিঁড়ে যেতে পারে। সাদা কাপড়ে ব্লিচ ব্যবহারের আগে অবশ্যই জেনে নেওয়া উচিত কীভাবে তা করতে হবে।
- প্রথমে কাপড়টিকে ঠাণ্ডা পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন, যাতে কাপড় নরম হয়। এরপর পরিমাণমতো ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে নিন। চাইলে এর সঙ্গে লন্ড্রি ডিটারজেন্ট, ডিশ ডিটারজেন্ট, বোরাক্স, বা ওয়াশিং ডিটারজেন্টও মিশিয়ে নিতে পারেন। মিশ্রণটি তৈরি করে কাপড় ৫-১০ মিনিটের জন্য ভিজিয়ে রাখুন। তারপর ঠাণ্ডা পানিতে ভেজানো কাপড়ের দাগের জায়গাটি হাতে হালকা করে ঘষুন, যাতে দাগ উঠে আসে। শেষে, কাপড়টি হালকাভাবে ধুয়ে ফেলুন।
- ওয়াশিং মেশিনেও ব্লিচ ব্যবহার করা যায়, তবে কিছু ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। প্রথমেই নিশ্চিত হয়ে নিন, মেশিন থেকে অন্য রঙের কাপড়গুলো সরিয়ে ফেলেছেন। এরপর, ব্লিচিং পাউডার অন্য ডিটারজেন্টের সঙ্গে মিশিয়ে ওয়াশিং মেশিনে দিন এবং কাপড়গুলো ভিজিয়ে রাখুন। পর্যাপ্ত তাপ দিয়ে মেশিনে ধুতে দিন। এরপর স্বাভাবিকভাবে কাপড়গুলো ধুয়ে ফেলুন। যদি দাগ পুরোপুরি না ওঠে, একই পদ্ধতিতে আবারও ধুতে পারেন।
- একইভাবে ডিটারজেন্ট দিয়ে আপনার সাদা পোশাকটি ভিজিয়ে রাখুন। এরপর ভেজানো অংশটি এমনভাবে সূর্যের তাপে রাখুন, যাতে রোদ সরাসরি সেই অংশে পড়ে। ধোয়ার পরও কাপড়কে রোদে ছড়িয়ে দিন। ভালোভাবে শুকিয়ে নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন, কারণ সূর্যের তাপে কাপড় যেমন দ্রুত শুকায়, তেমনি সাদা কাপড় আরও ঝকঝকে দেখায়।
- শুধুমাত্র সাদা কাপড়ের জন্য এই লন্ড্রী ব্লিচ ব্যবহার করুন। পরিমাণমতো ব্লিচ ব্যবহার করা খুব জরুরি, কারণ অতিরিক্ত ব্যবহার করলে কাপড় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সাদা কাপড়ের হলদে ভাব দূর করার উপায়
কয়েক দিন ব্যবহারের পর সাদা কাপড়ের হলদে ভাব চলে আসে। সাদা কাপড়ের হলদে ভাব দূর করতে কাপড় ধোয়ার সময় একটু সাদা ভিনেগার বা লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন। এটি কাপড়ের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। এছাড়া, সাদা পোশাকটি কড়া রোদে শুকালে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি প্রাকৃতিকভাবে সাদা কাপড়ের উজ্জ্বলতা আরও বাড়িয়ে দেয়। তাই, রোদে শুকানোর সময়টি মিস করবেন না।
যদি ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোয়ার কথা হয়, তাহলে মেশিনে ডিটারজেন্ট পাউডার বা লিকুইড ডিটারজেন্টের সঙ্গে দুই থেকে তিন চামচ কস্টিক সোডা মিশিয়ে জামাকাপড় ধোতে পারেন।
আর বাথটব পরিষ্কার করার জন্যও কস্টিক সোডা ব্যবহার করা যায়। এজন্য প্রথমে টবে গরম জল ভরুন, তারপর তাতে এক চা চামচ কস্টিক সোডা এবং এক চা চামচ লিকুইড ডিটারজেন্ট মিশিয়ে দিন। মিশ্রণটি পাঁচ মিনিটের জন্য রেখে দিন। এরপর টব থেকে জল বের করে স্ক্রাবার দিয়ে ভালো করে ঘষে নিন। তবে, টব পরিষ্কার করার আগে হাতের গ্লাভস পরে নিতে ভুলবেন না, যাতে আপনার হাত সুরক্ষিত থাকে!
বছরের পর বছর কিভাবে কাপড় ভালো রাখবেন?
- আমি আপনাকে বেশী দামী ও নামকরা ব্র্যান্ডের জামা কাপড় কিনতে বলব না। বরং আপনি একটু মানসম্মত জামা কাপড় কিনুন এটিই হবে ভালো কাজ। আপনি ভালো মানের একটি ওয়ারড্রোব ব্যবহার করবেন এতে আপনার কাপড় দীর্ঘদিন ভালো থাকবে।
বাচ্চাদের কাপড় কিনার সময় একটা বিষয় মাথায় আসে সেটা হল কোয়ালিটি ভার্সেস কোয়ান্টিটি। এ ক্ষেত্রে আপনি কোয়ান্টিটির ক্ষেত্রে বেশী নজর দিবেন। কারণ, বাচ্চাদের কাপড় বেশী দিন পরানো যায় না। কারণ, বাচ্চারা বেড়ে ওঠে তাড়াতাড়ি।
যখন আপনি বড়দের কাপড় কিনবেন তখন কোয়ালিটি সম্পন্ন কাপড় কেনাই উত্তম। শুধু বেশী দাম দিয়ে কাপড় কিনলেই ভালো মানের কাপড় পাওয়া যায় না।
ভালো মানের জামা কাপড় কেনার সময় কাপড়ের সেলাইয়ের ধরণ, বোতাম ফিটিং করে লাগানো কিনা, কাপড় অতিরিক্ত পাতলা কিনা সেগুলো খেয়াল করে ভালো কাপড়টি বেছে নিন। - কাপড় ধোয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবেঃ কাপড়কে বেশী দিন ভালো ও সুন্দর রাখতে হলে অবশ্যই কাপড় পরিষ্কার রাখতে হবে। কাপড়কে ভালো রাখতে হলে যত্নের সাথে কাপড় পরিষ্কার করতে হবে। কাপড় কেনার সময় শার্ট বা ব্লাউজের কলারের নিচে একটি টোকেন এ এর ধোয়ার নির্দেশিকা দেয়া থাকে। সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী কাপড় পরিষ্কার করলে কাপড় বেশী দিন ভালো থাকে।
- কাপড় ইস্ত্রি করার পদ্ধতি নির্ভর করে কাপড়ের ধরণের উপর। একেক ধরণের কাপড় একেক রকম ভাবে ইস্ত্রি করতে হয়। তাই ইস্ত্রি করার সঠিক পদ্ধতিটি জানা দরকার। সঠিক নিয়মে ইস্ত্রি না করলে অনেক সময় কাপড় পুড়ে যায় অথবা কাপড়ের রঙ জ্বলে যায়। কাপড় ইস্ত্রি করার সময় উল্টোদিক করে ইস্ত্রি করবেন।
একেক ধরণের কাপড় একেক তাপমাত্রা আয়রন করতে হয়।
বেনারসি শাড়ি, সিল্ক শাড়ি, হাফ সিল্ক শাড়িগুলো অনেক দিন ব্যবহার না করলে সাধারণত ভাঁজে ভাঁজে নষ্ট হয়ে যায়। একটা লাঠিতে পেঁচিয়ে রোল করে রাখলে শাড়ির ভাঁজে সাধারণত দাগ পড়ে না।
কাপড়ে দাগ পড়ে গেলে দাগটা যেন বসে না যেতে পারে, প্রথমেই সে ব্যবস্থা করতে হবে। কাপড়ের যে স্থানে দাগ পড়বে, সেখানে ট্যালকম পাউডার দিলে দাগটা শুষে নেয় পাউডার। এরপর ড্রাই ওয়াশ করে সংরক্ষণ করলে কাপড়ে দাগ পড়তে পারে না।
মাঝে মাঝে কাপড়কে উল্টিয়ে ধৌত করুন। তাহলে কাপড় ঝলমলে আর পরিপাটি থাকে। রোদে শুকানোর সময়ও সবসময় কাপড়ের উল্টোদিক করে দিন। এতে কাপড়ের রঙ ঠিক থাকে।
বিশেষ করে বাচ্চাদের কাপড় এবং দামী ভারী ট্র্যাডিশনাল কাপড় শুকানোর সময় এই বিষয়টা খেয়াল রাখবেন। কারণ, এই সব কাপড় কড়া রোদে শুকালে রঙ জ্বলে যায়।
আমাদের আর্টিকেলগুলোতে আমরা তথ্যগুলো খুব যত্ন নিয়ে উপস্থাপন করি, এবং আমি আশা করি আপনারাও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো শেয়ার করবেন। এভাবে আমরা একসঙ্গে জ্ঞান ভাগাভাগি করতে পারবো, যা সবার জন্যই উপকারী হবে। আপনার তথ্যের মাধ্যমে সবাই উপকৃত হতে পারে, তাই আসুন আমরা একসাথে শিখতে থাকি!