শীতে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি কমাতে টিকার গুরুত্ব: শীতকাল আসার সঙ্গে সঙ্গেই সিজনাল ফ্লু এবং নিউমোনিয়ার মতো সংক্রমণগুলো বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিশেষত যাঁরা বয়স্ক, শিশু, অথবা যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তাঁদের জন্য এই সময়ে এই রোগগুলো আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। তাই শীতকাল শুরুর আগেই ফ্লু ও নিউমোনিয়ার টিকা নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু আপনাকে সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করবে না, বরং শীতকাল কাটাতে আরও সুস্থ এবং নিরাপদ থাকতে সাহায্য করবে।
Table of Contents
শীতে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি কমাতে টিকার গুরুত্ব
ফ্লু ও নিউমোনিয়ার টিকা আমাদের শরীরকে এই রোগগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি জোগায়। টিকা নেওয়ার পর শরীরে এমন অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। যা রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এটি শুধু রোগের ঝুঁকি কমায় না। বরং সংক্রমণ হলে তার তীব্রতাও অনেকটা হ্রাস করে। তাই নিজেকে এবং আপনার প্রিয়জনদের সুস্থ রাখতে টিকা নেয়া দরকার।
গুরুতর জটিলতা থেকে সুরক্ষা
বয়স্ক ব্যক্তি, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে (যেমন ডায়াবেটিস, ক্যানসার, লিভার বা কিডনির সমস্যা, কিংবা এইডস) আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ফ্লু ও নিউমোনিয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। তবে টিকা গ্রহণের মাধ্যমে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।
হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি কমানো
শিশু এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে ফ্লু ও নিউমোনিয়ার কারণে প্রায়ই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সময়মতো টিকা নেওয়া হলে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে বাড়তি দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
অন্যদের সুরক্ষিত রাখা
টিকা নেওয়ার মাধ্যমে আপনি শুধু নিজেকেই রক্ষা করছেন না, বরং আপনার পরিবারের সদস্য এবং আশপাশের সমাজকেও এই রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করছেন। এটি একটি ছোট পদক্ষেপ। কিন্তু এর প্রভাব অনেক বড়। সবার সুস্থতার জন্য টিকা নেওয়া নিশ্চিত করুন।
কারা ঝুঁকিপূর্ণ?
১. ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তি: এই বয়সে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়, ফলে ফ্লু-এর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
২. শিশু, বিশেষ করে ছয় মাসের কম বয়সী শিশু: এ বয়সী শিশুদের প্রতিরোধব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিকশিত হয় না।
৩. অন্তঃসত্ত্বা নারী: গর্ভাবস্থায় শরীরের প্রতিরোধক্ষমতায় পরিবর্তন আসে, যা মায়ের ও শিশুর উভয়ের জন্য ফ্লু-এর ঝুঁকি বাড়ায়।
৪. দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি: যেমন হৃদ্রোগ, ফুসফুসের সমস্যা, ডায়াবেটিস, বা যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল।
৫. ফ্লু সিজনে হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তি: তাঁদের বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।
৬. স্বাস্থ্যসেবা কর্মী: যাঁরা নিয়মিত রোগীদের সংস্পর্শে থাকেন, তাঁদের ফ্লু-এর ঝুঁকি বেশি।
৭. হজযাত্রী, আর্মি বা পুলিশ ব্যারাক, হোস্টেল বা ডরমিটরিতে থাকা ব্যক্তি: একসঙ্গে অনেকের সঙ্গে থাকার ফলে ফ্লু দ্রুত ছড়াতে পারে।
৮. দীর্ঘস্থায়ী যত্নকেন্দ্রে থাকা ব্যক্তি: এ ধরনের পরিবেশে ফ্লু দ্রুত ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে।
৯. দেশে বা বিদেশে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ভ্রমণকারী: ভ্রমণের সময় সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
কয়টি ডোজ এবং কখন নেওয়া উচিত?
ফ্লু টিকা:
প্রতি বছর একবার ফ্লু ও নিউমোনিয়ার টিকা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ ফ্লু ভাইরাসের ধরনে প্রতিবছর পরিবর্তন হতে পারে। বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য প্রতিবছর এই টিকা নেওয়া তাঁদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
নিউমোকক্কাল টিকা:
নিউমোনিয়া প্রতিরোধে এই টিকা নেওয়া যেতে পারে একবার বা একাধিকবার। ডোজের সংখ্যা নির্ভর করে ব্যক্তির বয়স, শারীরিক অবস্থা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যগত কারণের ওপর। সঠিক তথ্য ও দিকনির্দেশনার জন্য আপনার নিকটস্থ টিকাকেন্দ্র বা চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
কোথায় টিকা নেবেন?
স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতাল থেকে আপনি সহজেই ফ্লু ও নিউমোনিয়ার টিকা নিতে পারেন। বর্তমানে আমাদের দেশে ইপিআই (Expanded Program on Immunization) কেন্দ্রে ছয় মাস বয়সী শিশুদের জন্য নিউমোকক্কাল নিউমোনিয়ার টিকা দেওয়া হচ্ছে। আপনার নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালের সঠিক সময়ে এই টিকা নিতে পারেন।
সতর্কতা
যেকোনো টিকার মতো, ফ্লু ও নিউমোকক্কাল টিকারও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। তবে সাধারণত এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হালকা এবং অস্থায়ী হয়। যেমন টিকাস্থানে লাল হয়ে ফুলে যাওয়া, ব্যথা বা সামান্য জ্বর।
টিকা নেওয়ার আগে, যদি আপনার কোনো অ্যালার্জি বা অন্য রোগ থাকে, তাহলে দয়া করে আপনার চিকিৎসককে জানান। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টিকা নেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ।
তীব্র শীত আসার আগে, প্রয়োজন অনুযায়ী ফ্লু ও নিউমোনিয়ার টিকা নিয়ে নিজেকে এবং আপনার প্রিয়জনদের সুরক্ষিত রাখুন। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে সচেতন থাকলেই আপনি ও আপনার পরিবার সুস্থ থাকতে পারবেন।