রাষ্ট্রপতির সইয়ে শুরু ওয়াকফ আইন, এবার কী শক্তি হারাবে ওয়াকফ বোর্ড? নতুন রূপে আইন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল ২০২৫। শনিবার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সম্মতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি আইনে পরিণত হয়।
সংসদের দুই কক্ষেই দীর্ঘ আলোচনার পর অবশেষে পাস হয় ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল ২০২৫। লোকসভায় বিলটি পেশ হয় গত বুধবার। এরপর রাজ্যসভায় চলে টানা প্রায় ১২ ঘণ্টার আলোচনা—প্রশ্ন, মতবিরোধ, যুক্তি-পাল্টা যুক্তিতে ভরপুর ছিল সেই বৈঠক।
সবশেষে, ৫ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এই বিলটিতে স্বাক্ষর করার পরই তা আইনের রূপ পায়। অর্থাৎ এখন আর শুধুই প্রস্তাব নয়, ওয়াকফ সংশোধনী এখন থেকে দেশের আইনেরই অংশ।
ওয়াকফ আইন কী
আইনটির মূল উদ্দেশ্য ও কেন্দ্রের অবস্থান
কেন্দ্র সরকারের মতে, এই নতুন আইন শুধুমাত্র প্রশাসনিক পরিবর্তন নয়—এটি মুসলিম সমাজের সার্বিক উন্নয়নের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
সরকারের বিশ্বাস, এই আইনের মাধ্যমে বিশেষ করে মুসলিম মহিলারা আরও বেশি ক্ষমতায় empowered হবেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের সুযোগ পেলে তাঁরা সমাজে আরও দৃঢ়ভাবে নিজেদের অবস্থান গড়ে তুলতে পারবেন।
সরকারের যুক্তি, সারা দেশে প্রায় ৮.৭২ লক্ষ ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে—যেগুলোর যথাযথ ব্যবস্থাপনা হলে শুধু মুসলিম সমাজই নয়, গোটা দেশই এর সুফল পাবে। এই বিপুল পরিমাণ সম্পত্তিকে যদি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহারের আওতায় আনা যায়, তাহলে তা থেকে আসা আয় শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা, আর্থিক সহায়তা ও সামাজিক কল্যাণমূলক কাজের জন্য কাজে লাগানো যেতে পারে।
দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা দূর করে, এই সম্পত্তিগুলিকে জনহিতৈষী কাজে ব্যবহারের উপযোগী করাই আইনটির মূল উদ্দেশ্য।
বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া
তবে এই নতুন আইনকে ঘিরে শুরু হয়েছে জোরদার রাজনৈতিক বিতর্ক। কংগ্রেস, তৃণমূল সহ একাধিক বিরোধী দল এর তীব্র বিরোধিতা করেছে। তাঁদের আশঙ্কা, এই আইনের মাধ্যমে ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা খর্ব হচ্ছে—যার ফলে মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার ও স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বিরোধীদের দাবি, এই পরিবর্তনের ফলে মুসলিম সমাজের নিজস্ব সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার স্বাধীনতা কমে যাবে, এবং সেটি সরকারি নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে কলকাতার পার্ক সার্কাসে জয়েন্ট ফোরাম অফ ওয়াকফ প্রোটেকশনের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভও হয়। সেখানে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরাও অংশ নেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে।
ওয়াকফ আইন কী?
মুসলিম সমাজে যে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি ধর্মীয় বা জনকল্যাণমূলক উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়, তাকেই ওয়াকফ বলা হয়। সাধারণত মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান, অথবা গরীবদের সেবার কাজে ব্যবহৃত হয় এই সম্পত্তি, যার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকে ওয়াকফ বোর্ডের উপর।
Waqf Amendment Bill 2025 Pdf Download: CLICK HERE