নিপাহ ভাইরাস ইনফেকশন: শীতের আমেজ আসতেই গ্রামবাংলায় খেজুরের রস খাওয়ার আনন্দে মেতে ওঠে সবাই। পিঠাপুলি বানানোর জন্যও খেজুরের রস, তালের রসের মতো প্রাকৃতিক মিষ্টি উপাদানগুলির ব্যবহার বাড়ে। তবে খেজুরের কাঁচা রস পান করার আগে সতর্ক হওয়া জরুরি। কারণ এটি থেকে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকতে পারে। আসুন জেনে নিই এ সম্পর্কে:
Table of Contents
খেজুরের রস কীভাবে রস দূষিত হয়
খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য গাছে হাঁড়ি বেঁধে রাখা হয়। তবে সমস্যা দেখা দেয় যখন বাদুড় বা এ ধরনের প্রাণী সেই হাঁড়িতে মুখ দেয়। বাদুড়ের লালার মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস রসে প্রবেশ করে এবং তা দূষিত হয়ে যায়। যদি কেউ এই দূষিত রস কাঁচা অবস্থায় পান করেন, তাহলে ভাইরাসটি তার শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
নিপাহ ভাইরাস কী
নিপাহ ভাইরাস এক ধরনের জুনোটিক ভাইরাস, যা সাধারণত প্রাণীদের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। তবে, একে অপরের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে এটি মানুষ থেকে মানুষেও ছড়াতে পারে। এই ভাইরাসের সংক্রমণ সাধারণত জ্বর, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ এবং মস্তিষ্কের প্রদাহ (এনকেফালাইটিস) সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে, এনকেফালাইটিস আক্রান্ত হলে মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ।
নিপাহ ভাইরাস কীভাবে বুঝবেন
নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে সাধারণত জ্বর, মাথাব্যথা, পেশিতে ব্যথা, গলাব্যথা বা বমি দেখা দেয়। যদি মস্তিষ্কে প্রদাহ হয়, তবে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রোগী অচেতন হয়ে যেতে পারেন এবং খিঁচুনি শুরু হতে পারে। যদি আপনি গত কয়েক দিনের মধ্যে কাঁচা খেজুরের রস পান করে থাকেন, তবে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।
নিপাহ ভাইরাস ইনফেকশন
নিপাহ ভাইরাস থেকে বাঁচতে, কখনোই কাঁচা খেজুরের রস পান করা উচিত নয়। রস জ্বাল দিলে এর মধ্যে থাকা ভাইরাস মরে যায়। তাই, রসকে ভালো করে স্ফুটনাংকের ওপর জ্বাল দিতে হবে এবং ঠান্ডা করে খেতে হবে।
গুড় বানানোর সময় ভাইরাস মারা যায়, তাই খেজুরের গুড় খাওয়া নিরাপদ।
বাদুড় থেকে রক্ষা পেতে, গ্রামাঞ্চলে রসের হাঁড়ি সাধারণত ধইঞ্চা, বাঁশের চিক, পাট বা পলিথিনের ব্যাগ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। তবে, এর পরও সতর্কতা অবলম্বন করতে, খাওয়ার আগে রস জ্বাল দিয়ে নেওয়া উচিত।
এছাড়া, আধ-খাওয়া ফল কখনোই কাঁচা খাওয়া উচিত নয়। গাছ থেকে পেড়ে যেকোনো ফল ভালো করে ধুয়ে খেতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের এই অভ্যাস রপ্ত করাতে হবে।
সতর্কতা
গ্রামাঞ্চলে যেখানে খেজুরের রস খাওয়ার প্রচলন বেশি, সেসব এলাকায় এ মৌসুমে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। যদি কেউ জ্বর পর অচেতন হয়ে পড়েন, তবে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া উচিত।
ভাইরাসটি অন্যদেরও সংক্রমিত করতে পারে, তাই রোগীর সেবাদানকারী ও হাসপাতালের চিকিৎসক বা নার্সদের মুখে মাস্ক পরা উচিত এবং রোগীর সেবা শেষে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
অতিরিক্ত ভিড় করা রোগীর কাছে পরিহার করতে হবে।
বর্তমানে, নিপাহ ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো টিকা বা কার্যকর ওষুধ নেই, তাই সচেতনতাই সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ, প্রফেসর ইমেরিটাস, বিএসএমএমইউ