Showing Cartoons: “আমার বাচ্চা খেতে চায় না”—এটি যেন প্রায় প্রতিটি মায়ের মুখে শোনা অভিযোগ। খাবারের সময় শিশুরা নানা দুষ্টুমি করে, খাবার মুখে নিতে চায় না। এই ধরনের সমস্যার সমাধানে মা-বাবারা অনেক সময় মোবাইলে কার্টুন চালিয়ে দেন। শিশুটি কার্টুনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই তারা জোর করে খাবার মুখে ঢেলে দেন। শেষে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে ভাবেন, “যাক বাবা, এবেলা সব খাবার খাওয়াতে পেরেছি!” কিন্তু এতে কি সত্যিই উপকার হচ্ছে?
Showing Cartoons: কী হয় এভাবে খাওয়ালে
মোবাইলে কার্টুন দেখিয়ে শিশুদের খাওয়ালে আসলে একটি শর্তাধীন অবস্থা তৈরি হয়। এর ফলে প্রতিবার খাবারের সময় তার মোবাইলে কার্টুন দেখতে হয়। আর সেই সঙ্গে খাবারের প্রতি তার চাহিদা তৈরি হয়। অনেক বাবা-মা ভাবেন, “ভালোই তো, বাচ্চাটি বেশি বেশি খাচ্ছে! কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে আসলে অনেক ঝুঁকি আছে।
প্রথমত, এতে শিশুদের মোবাইলের প্রতি নির্ভরশীলতা এবং আসক্তি বাড়ে। দ্বিতীয়ত, যখন তারা মোবাইলের দিকে মনোযোগ দেয়, তখন খাবারের স্বাদ পুরোপুরি উপভোগ করতে পারে না—অর্থাৎ, তারা কেবল গিলে খায়। ফলে, তাদের সুস্থ খাদ্যাভ্যাস তৈরি হয় না।
আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, ঠিকমতো চিবিয়ে না খাওয়ার কারণে হজমের সমস্যা দেখা দেয় এবং সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত হয় না। এতে কোষ্ঠকাঠিন্যসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। মোবাইলে কার্টুন এর সামনে বসে ভাজাপোড়া ও স্ন্যাকস খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলে, যার পরিণতি অল্প বয়সে মুটিয়ে যাওয়া এবং কিশোর বয়সে ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়া।
তাহলে কী করবেন
- শিশুর পছন্দমত খাবার দিন: শিশুকে তার পছন্দের খাবার খেতে দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তবে তা অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে। শিশুর পছন্দের বাইরে জোর করে খাবার খাওয়ালে তার মধ্যে খাবারের প্রতি অনীহা তৈরি হতে পারে। তাই আমাদের উচিত শিশুদের স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার চেষ্টা করা, যা তাদের পছন্দও হবে।
- পূর্ন ভাবে খিদে পেলেই খাবার দিন: বাচ্চাদের খিদে না পেলে খেতে চায় না, আর এটাই অনেক অভিভাবকের জন্য একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। আমরা প্রায়ই বাচ্চাদের জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করি। কিন্তু এতে সাধারণত কিছু ভালো ফল আসে না। অনেক সময় তারা কান্নাকাটি করে, খিটখিটে হয়ে যায়, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে বমিও করে বা বদহজমের সমস্যায় পড়ে। তাই খেয়াল রাখুন বাচ্চার দিকে ও শিশুর খিদে পেলেই শুধু খেতে দিন।
- যখন তখন খাওয়ানো পরিহার করুন: শিশুকে যখন তখন খাওয়ানো আসলে তাদের খিদে নষ্ট করতে পারে এবং সঠিক খাদ্যাভাস গড়ে ওঠা ব্যাহত করে। অনেক সময় আমরা ভাবি, “ও খাচ্ছে না, তাই একটু খাইয়ে দিই,” কিন্তু এতে আসলে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে যায়।
- নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী খাওয়ান: কোনো শিশুকে কী খাওয়াচ্ছেন, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল কখন খাওয়াচ্ছেন। শিশুকে নিয়মিত সময়সূচী মেনে খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তোলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার শিশুর খাবার সময়মতো দেওয়া হয়, তাহলে তাদের শরীরের অভ্যস্ততা ও মেটাবলিজম ঠিক থাকবে। নিয়মিত খাদ্য গ্রহণের ফলে তাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং শারীরিক বৃদ্ধি সঠিকভাবে হবে।
- প্রতিবার খাওয়ানোর পর বিরতি দিন: প্রতিবেলা খাবারের মাঝে একটু বিরতি দেওয়া খুবই জরুরি। এই সময়ে যদি অন্য কোনো খাবার দেওয়া হয়, তাহলে শিশুর খিদে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। দুই বছরের বেশি বয়সের বাচ্চাদের অন্তত ২-৩ ঘণ্টা অন্তর খাবার দেওয়া উচিত। এই সময়ের মধ্যে তাদেরকে খেলার জন্য বা নিজেদের মতো চলাফেরা করতে দেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে তাদের শরীরের কার্যক্রম ভালোভাবে চলতে থাকবে এবং খাবার তাড়াতাড়ি হজম হবে।
- কার্টুন বা টিভি দেখিয়ে খাওয়াবেন না: শিশুদের টিভি বা কার্টুন দেখিয়ে খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তোলা ঠিক নয়। এই অভ্যাসটি শিশুদের মধ্যে একটি নির্ভরশীলতা তৈরি করে, যা তাদের স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাসের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যখন শিশুরা টিভি বা কার্টুন দেখছে, তখন তারা খাবারের প্রতি মনোযোগ কমিয়ে দেয়, ফলে তাদের খাবার গ্রহণের রুটিন এবং হজমেও সমস্যা হতে পারে। তাই, এই ধরনের বদ অভ্যাস থেকে শিশুদের দূরে রাখতে চেষ্টা করুন।
- অযথা জোর করবেন না: জোর করে খাওয়ানোর চেয়ে শিশুর ভালোবাসা দিয়ে খাওয়ানো অনেক বেশি কার্যকর। যখন আমরা শিশুদের জোর করে খাওয়াই, তখন তা তাদের মধ্যে খাবারের প্রতি ভয় ও অনিচ্ছার জন্ম দেয়। এর ফলে তারা খাবারের প্রতি অনীহা প্রকাশ করে এবং কখনও কখনও আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ে। তাহলে, জোর করে খাওয়ানোর পরিবর্তে, সময় নিয়ে বুঝিয়ে-শুনিয়ে তাদের খাওয়ানো উচিত। তাদের পছন্দের খাবারগুলির সাথে স্বাস্থ্যকর অপশনও অন্তর্ভুক্ত করুন। এতে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে খেতে আগ্রহী হবে এবং খাবারের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে পারবে।
- খাবারে ভিন্নতা নিয়ে আসুন: একই খাবার প্রতিদিন বাচ্চাদের খাওয়ালে তারা তাতে একঘেয়েমি অনুভব করতে পারে, এবং এর ফলে তাদের ওই খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। যখন শিশুরা একই খাবার খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে যায়, তখন তারা খেতে চায় না। সুতরাং, তাদের খাবারে কিছু ভিন্নতা আনুন! বিভিন্ন ধরণের পুষ্টিকর খাবার তাদের সামনে তুলে ধরুন—মাংস, সবজি, ফল এবং বিভিন্ন ধরনের দানা। এতে করে তাদের খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়বে এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে উঠবে। একটু নতুনত্ব তাদের খাওয়ার অভিজ্ঞতাকে আরও আনন্দময় করে তুলতে পারে!
- বাইরের খাবার খাওয়াবেন না: বাইরের খাবার শিশুর মুখের স্বাদ নষ্ট করে দিতে পারে, এবং এগুলোর পুষ্টিগুণ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। অনেক সময় এই খাবারগুলো অতিরিক্ত সুস্বাদু করার জন্য বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়, যা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। যদি শিশুরা বাইরের এই মুখরোচক খাবারে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তাহলে তারা ন্যাচারাল খাবারের প্রতি আগ্রহ হারাতে পারে। তাই খেয়াল রাখুন, তাদের যখন তখন চকলেট, চিপস বা ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবার খাওয়াবেন না। বরং, তাদের পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াতে উৎসাহিত করুন, যাতে তারা সঠিক পুষ্টি পায় এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join JKNEWS24 Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join NEWS24 |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |