চুইংগাম খেতে ভালোবাসেন না, এমন মানুষ খুব কমই আছেন। অবসরে হোক বা কাজের ফাঁকে, এক টুকরো চুইংগাম মুখে দিলে যেন একরকমের রিফ্রেশিং ফিলিং আসে! কিন্তু অনেকেই মনে মনে ভাবেন—এই চুইংগামটা দাঁতের জন্য ভালো তো? আবার কেউ কেউ দুশ্চিন্তায় পড়ে যান যদি গিলে ফেলেন—তাহলে কি পেটে গিয়ে বিপদ ঘটাবে? এইসব প্রশ্ন একেবারেই স্বাভাবিক, কারণ ছোটবেলা থেকেই তো শুনে আসছি, “চুইংগাম গিলে ফেললে পেটে আটকে যায়!”
চুইংগাম ভালো নাকি খারাপ?
দাঁতের জন্য চুইংগাম ভালো নাকি খারাপ?
চুইংগাম খাচ্ছেন মজা করে, কিন্তু জানেন কি—সেই মজাটাই দাঁতের জন্য কখনও কখনও ডেকে আনতে পারে বিপদ? হ্যাঁ, বিশেষ করে যদি সেটা হয় চিনি-যুক্ত চুইংগাম। এতে থাকা চিনি মুখের ভেতর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দেয়, যেগুলো দাঁতের ক্ষয় ঘটায় আর মুখে দুর্গন্ধ তৈরি করে। শুনতে যতটা ছোট সমস্যা মনে হয়, সময়মতো খেয়াল না রাখলে কিন্তু দাঁতের জন্য বড় বিপদ!
অন্যদিকে, চিনিমুক্ত বা সুগার-ফ্রি চুইংগাম কিন্তু আসলেই অনেক ভালো একটা অপশন। এতে থাকে জাইলিটল নামের এক বিশেষ উপাদান, যা মুখে লালার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। আর এই লালার মধ্যেই থাকে ক্যালসিয়াম ও ফসফেট—দাঁতকে মজবুত রাখতে দরকারি উপাদান। শুধু তাই নয়, সুগার-ফ্রি চুইংগাম মুখের ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিহত করে, আর এতে থাকা সংরক্ষণকারী উপাদান কাজ করে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে, যা আমাদের মুখের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
চুইংগাম আসলেই মানসিক অবসাদগ্রস্ততা দূর করতে পারে?
অনেক সময় টেনশনে থাকলে বা মন খারাপ হলে চুপচাপ বসে থেকে এক টুকরো চুইংগাম মুখে দিয়ে চিবোতে শুরু করি—বুঝে হোক বা না বুঝে, আমরা আসলে তখন নিজেকেই সান্ত্বনা দিচ্ছি! গবেষণায় দেখা গেছে, চুইংগাম শুধু মন ভালো করে না, বরং দুশ্চিন্তা কমিয়ে দেয়। যখন আমরা চুইংগাম চিবোই, তখন মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়ে, আর সেই সঙ্গে কমতে থাকে মানসিক চাপের জন্য দায়ী হরমোনগুলোর মাত্রা। আরও চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, এই চিবিয়ে যাওয়ার ক্রিয়াটাই স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করতে পারে! মানে একদিকে আপনি টেনশন ফ্রি হচ্ছেন, আরেকদিকে আপনার ব্রেইনও হয়ে উঠছে আরও শার্প।
চুইংগাম কি ওজন কমাতে পারে?
চিন্তা করছেন ওজন কমাতে কী করবেন? প্রতিদিনের খাওয়া-দাওয়া সামলে একটু আধটু চুইংগাম চিবোন, সেটাও কিন্তু কাজে আসতে পারে! চুইংগাম চিবোলে অনেক সময় ক্ষুধা তেমন একটা লাগে না—এই অনুভূতিটাই অনেকটা ক্ষুধামান্দ্যের মতো। ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। আর চিবোতে চিবোতে শরীরের মেটাবোলিজমও একটু বেড়ে যায়, যা ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। বিশেষ করে যেসব চুইংগামে জাইলিটল থাকে—ওগুলো কিন্তু বেশ হেলদি অপশন। মিষ্টি স্বাদ থাকলেও ক্যালরির পরিমাণ অনেক কম, আর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাও ঠিক রাখে। মানে দাঁড়ায়—মজা, স্বাদ আর হেলথ—সব একসাথে!
হঠাৎ করে যদি চুইংগাম গিলে ফেলেন তাহলে কী করবেন?
চুইংগাম খেতে খেতে মাঝে মাঝে ভুল করে গিলে ফেলাটা খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। এমনটা হতেই পারে, আর সেটা হলে ঘাবড়ানোরও কিছু নেই। কারণ সাধারণত একটা চুইংগাম গিলে ফেললে সেটা ২৪ ঘণ্টা থেকে ৭ দিনের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবেই মলের সঙ্গে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু তাই বলে একের পর এক চুইংগাম গিলে ফেলা মোটেও ঠিক না! অতিরিক্ত চুইংগাম একসঙ্গে গিলে ফেললে সেটা অন্ত্রে জমে গিয়ে অবরুদ্ধতার কারণ হতে পারে, যেটা কিন্তু বেশ বিপজ্জনক। তাই চিবোন, মজা নিন, কিন্তু গিলে ফেলার বেলায় একটু সতর্ক থাকুন—তাতেই সুখী পেট, সুখী মন!
চুইংগাম খাওয়ার সময় সতর্কতা
চুইংগাম খেতে খেতে অনেকেই ভাবেন, “এতে আর কী ক্ষতি হবে!” কিন্তু বিশ্বাস করুন, অতিরিক্ত কিছুই ভালো না—চুইংগামও তার ব্যতিক্রম নয়। যেমন, চিনিমুক্ত চুইংগামে থাকা জাইলিটল নামের উপাদানটা একদিকে উপকারী হলেও, বেশি খেলে সেটাই ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে। আবার যাঁদের হজমে সমস্যা আছে, তাঁদেরও চুইংগাম খাওয়ার সময় একটু সাবধানে থাকতে হবে। চিনিযুক্ত চুইংগাম তো আরও চিন্তার বিষয়—যেটা ওজন বাড়ায় এবং ডায়াবেটিসের আশঙ্কাও বাড়িয়ে তোলে।
আরও একটা ব্যাপার অনেকেই জানেন না—চুইংগাম বেশি সময় ধরে চিবোলে মুখের টেম্পোরোম্যান্ডিবুলার জয়েন্ট (যেখানে চোয়াল খুলে বন্ধ হয়) সরে যেতে পারে, যার ফলে হতে পারে ব্যথা ও অস্বস্তি। এমনকি কিছু মানুষের ক্ষেত্রে চুইংগাম খাওয়ার সঙ্গে মাথাব্যথা বা মাইগ্রেনের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার সম্পর্কও পাওয়া গেছে।
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join JKNEWS24 Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join NEWS24 |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |