পুরুষদের টাক পড়ার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ‘মেল প্যাটার্ন বল্ডনেস’-এর পেছনে বেশিরভাগ সময় বংশগত কারণকে দায়ী করা হয়। তবে এখন গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবেশ ও জীবনযাত্রার কিছু অভ্যাসও চুল পড়া বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ৩০-এর কোঠায় পা দেওয়ার পর অনেকেরই চুল পড়া শুরু হয়, যা ধীরে ধীরে টাকের দিকে নিয়ে যায়। কেন এই বয়সেই চুল পড়তে শুরু করে এবং কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়, তা জেনে নিন।
Table of Contents
৩০ বছরের শুরুতেই টাক পড়ার কারণ কী কী
স্থবির জীবনধারা: যদি সারাক্ষণ বসে কাজ করেন এবং শারীরিকভাবে কম সক্রিয় থাকেন, তাহলে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। এর ফলে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়, যা চুলের ফলিকল দুর্বল করে দেয় এবং চুল পড়া বাড়িয়ে তোলে। তাই নিয়মিত হাঁটা-চলা, ব্যায়াম বা ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি রাখার চেষ্টা করুন।
দীর্ঘমেয়াদি চাপ: দৈনন্দিন জীবনের কাজের চাপ, দুশ্চিন্তা বা টেনশন আমাদের শরীরে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এই অতিরিক্ত কর্টিসল চুলের গোড়া দুর্বল করে দেয়, যার ফলে চুল পড়া বাড়তে থাকে। তাই স্ট্রেস কমানোর জন্য নিয়মিত মেডিটেশন, ব্যায়াম বা পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া জরুরি।
অপর্যাপ্ত ঘুম: ঠিকমতো ঘুম না হলে শরীর যেমন ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তেমনি চুলের ফলিকলও দুর্বল হয়ে যায়। পর্যাপ্ত বিশ্রাম ছাড়া চুলের গোড়া ঠিকভাবে পুনরুজ্জীবিত হতে পারে না, ফলে চুল পড়া বেড়ে যায়। তাই প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা গভীর ও নিরবচ্ছিন্ন ঘুম নিশ্চিত করা জরুরি।
প্রক্রিয়াজাত খাবার: নিয়মিত ফাস্ট ফুড বা প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলে শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়। এতে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, যা চুলের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে এবং চুল পড়ার সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। তাই স্বাস্থ্যকর, পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, যাতে চুল শক্তিশালী ও সুস্থ থাকে।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: শরীরে যদি অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, তাহলে ডিএইচটি (ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরন) হরমোনের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। এই হরমোন চুলের ফলিকলকে দুর্বল করে দিয়ে ধীরে ধীরে চুল পড়ার হার বাড়িয়ে দেয় এবং টাক পড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাই হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম ও নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।
৩০ বছরেই টাক পড়ছে? টাক পড়ার কীভাবে প্রতিরোধ করবেন
পুরুষদের টাক পড়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, তবে সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো জিনগত প্রভাব। পরিবারে যদি কারও চুল পড়ার ইতিহাস থাকে, তাহলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ব্যক্তিও চুল পড়ার ঝুঁকিতে থাকেন। এই ধরনের চুল পড়াকে বলা হয় অ্যান্ড্রোজেনিক অ্যালোপেসিয়া। তবে শুধু জিন নয়, আরও অনেক কারণেই পুরুষদের মাথায় টাক পড়তে পারে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন শোভন মেকওভারের কসমেটোলজিস্ট শোভন সাহা এবং সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক এস এম বখতিয়ার কালাম।
চুল পড়া নানা কারণে হতে পারে, যেমন অসুস্থতা বা ওষুধের প্রভাব, থাইরয়েডের সমস্যা, স্ক্যাল্প বা ত্বকের রোগ, কিংবা চুল টেনে তোলার বদভ্যাস (ট্রাইকোটিলোম্যানিয়া)। এর পাশাপাশি ক্যানসার, দুশ্চিন্তা, হৃদ্রোগ, আর্থ্রাইটিস, চর্মরোগ, খুশকি, ঘাম এবং অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোনের কারণে অনেকের মাথায় টাকও পড়তে পারে। আবার, নিয়মিত দুশ্চিন্তা, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং রাসায়নিক প্রসাধনী ব্যবহারের কারণে চুল পড়া আরও বাড়তে পারে। এসব বিষয়গুলো আমাদের চুলের স্বাস্থ্যের উপর বেশ বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, তাই সুস্থ জীবনযাপন এবং সঠিক যত্ন নেওয়া জরুরি।
চুল পড়া বন্ধে প্রাকৃতিক পদ্ধতিগুলো গ্রহণ করুন
চুল পড়া বন্ধ করার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী ঘরোয়া প্রতিকার হলো গরম তেল দিয়ে মাথার ত্বকে মালিশ করা। আপনি সহজেই বাদাম বা নারকেল তেল গরম করে, তা মাথার ত্বকে ভালো করে ম্যাসাজ করতে পারেন। এইভাবে, চুলের ফলিকলগুলোতে রক্ত প্রবাহ বাড়ে, ফলে চুলের শিকড় শক্তিশালী হয় এবং মাথার ত্বকও কন্ডিশনার হয়ে যায়। এটি আপনার চুলকে প্রাকৃতিকভাবে স্বাস্থ্যকর এবং উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করবে।
কিছু গবেষণা পরামর্শ দেয় যে রোজমেরি তেল চুলের বৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করতে পারে এবং চুল পড়া রোধে কার্যকরী হতে পারে। এমনকি কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, অ্যান্ড্রোজেনিক অ্যালোপেসিয়া (মাথার টাক) চিকিৎসার সময় রোজমেরি তেলের কার্যকারিতা মিনোক্সিডিলের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে রোজমেরি তেল ব্যবহারের জন্য, এটি আপনি জোজোবা বা আরগান তেলের মতো ক্যারিয়ার তেলের সঙ্গে মিশিয়ে মাথার ত্বক এবং চুলে ভালো করে ম্যাসাজ করতে পারেন। এছাড়াও, আপনি এটি আপনার কন্ডিশনার এবং শ্যাম্পুতে যোগ করে ব্যবহার করতে পারেন। এটি চুলের স্বাস্থ্য বাড়াতে সহায়তা করবে।
বাড়িতে চুল পড়া সমাধান হিসেবে আপনি লেবু তেল ব্যবহার করতে পারেন। লেবু তেলের মধ্যে একটি বায়োঅ্যাকটিভ রাসায়নিক রয়েছে, যার নাম সিনাপিক অ্যাসিড, যা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং মাথার ত্বককে সুস্থ রাখে। চুলের স্বাস্থ্য বাড়াতে এবং পড়া রোধ করতে, আপনি শ্যাম্পু করার ১৫ মিনিট আগে লেবুর রস চুল এবং মাথার ত্বকে লাগাতে পারেন। এছাড়া, আপনি ক্যারিয়ার তেলে লেবুর অপরিহার্য তেল মিশিয়ে এটি চুলের মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনার চুলকে প্রাকৃতিকভাবে স্বাস্থ্যবান ও উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করবে।
চুল পড়ার জন্য সবচেয়ে প্রচলিত ঘরোয়া প্রতিকারের মধ্যে অ্যালোভেরা অন্যতম। নানা উপাখ্যানমূলক প্রমাণ অনুযায়ী, এটি মাথার ত্বককে প্রশমিত করে, চুলকে কন্ডিশনারের মতো নরম করে, চুলের ফলিকলগুলো খুলে দেয় এবং খুশকি কমাতে সহায়তা করে। আপনি চুলের কন্ডিশনার বা শ্যাম্পুতে অ্যালোভেরা যোগ করতে পারেন, এছাড়াও সরাসরি মাথার ত্বকে অ্যালোভেরা জেল লাগিয়েও উপকার পেতে পারেন। এটি আপনার চুলকে সুস্থ ও ঝকঝকে রাখবে।