Poor Sleep Quality: অনেকে দিনভর ৮-৯ ঘণ্টা বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকেন, কিন্তু তাদের ঘুমের মান ঠিক থাকে না। এর ফলে শরীর ধীরে ধীরে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। তাই বিপদ বাড়ানোর আগে চিকিৎসকের কাছ থেকে ঠিকঠাক ঘুম না হওয়ার লক্ষণগুলি বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া উচিত।
ঘুম একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, যা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন জরুরি কাজ সম্পন্ন করতে সাহায্য করে। এমনকি আমাদের শরীর নিজেকে সারিয়ে তোলার কাজও ঘুমের মধ্যেই সম্পন্ন করে।
তবে সমস্যা হল, আজকাল অনেকেই ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা বিছানায় শুয়ে থাকেন, কিন্তু তাঁদের ঘুম ঠিকভাবে হয় না। এই কারণে শরীরে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে এবং ধীরে ধীরে নানা ধরনের রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
আপনার মনে প্রশ্ন হতে পারে, ঘুম ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা তা কীভাবে বুঝবেন? কলকাতা শহরের বিশিষ্ট পালমুনোলজিস্ট এবং ঘুম বিশেষজ্ঞ ডা. অরূপ হালদার এই বিষয়টিতে নিজের মতামত দিয়েছেন। তাই সময় নষ্ট না করে দ্রুত তাঁর পরামর্শ জেনে নিন। এসব লক্ষণ দেখলেই সাবধান হন!
সব খবর
Poor Sleep Quality:
ঘুম হচ্ছে না লক্ষণগুলি কি কি?
ঘুম থেকে ওঠার পরও যদি চোখ তন্দ্রাচ্ছন্ন লাগে, দুর্বল অনুভব করেন, কাজের প্রতি মন বসে না, বারবার ভুল করে ফেলেন, ছোট ছোট জিনিস ভুলে যান, অথবা নতুন কিছু শিখতে সমস্যা হয়—এগুলো ঘুমের মান ঠিক না হওয়ার লক্ষণ হতে পারে। তাই এই ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে, চেষ্টা করুন ভালোভাবে ঘুমানোর। অন্যথায়, ধীরে ধীরে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ঠিকমতো না ঘুমোলে কী কী সমস্যা হতে পারে?
ঠিকমতো না ঘুমোলে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। ঘুমের অভাবে শরীরের নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হতে পারে না। এর ফলে আপনি ক্লান্তি, দুর্বলতা, মনোযোগের অভাব, এবং কাজের প্রতি আগ্রহ কমে যেতে পারে। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যায়, যা নতুন কিছু শেখা বা স্মৃতিশক্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে। এছাড়া, দীর্ঘমেয়াদে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হতে পারে, এবং হার্ট, ডায়াবেটিস, বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই ভালোভাবে ঘুমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ডা. অরূপ হালদার জানিয়েছেন, ‘‘দীর্ঘদিন ভালোভাবে না ঘুমালে ব্লাড প্রেশার বাড়তে পারে, যা হার্টের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এই কারণে হৃৎপিণ্ডের ছন্দপতনও ঘটতে পারে। ঘুমের অভাবে স্নায়ুতন্ত্রের উপর সরাসরি প্রভাব পড়ে, যার ফলে ডিমেনশিয়া, অ্যালঝাইমার্সের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। এমনকি মস্তিষ্কে স্ট্রোকের মতো ভয়াবহ সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই চেষ্টা করুন সঠিকভাবে ঘুমানোর।
দিনে কতক্ষণ ঘুমানো প্রয়োজন
বয়স অনুযায়ী ঘুমের চাহিদা বাড়ে-কমে। যেমন, বাচ্চাদের বেশি সময় ঘুমানো প্রয়োজন, কারণ এতে তারা দ্রুত বেড়ে ওঠে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঘুমের সময়ও কমে যায়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য সাধারণভাবে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। তবে, শুধু চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলেই চলবে না—ঘুমের মানও ঠিক রাখতে হবে। ভালোভাবে ঘুমাতে পারলে শরীর থাকবে সুস্থ ও সবল।
দিনে কতক্ষণ ঘুমানো প্রয়োজন, এটা বেশিরভাগ মানুষের বয়স এবং জীবনযাত্রার ওপর নির্ভর করে। সাধারণভাবে, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উত্তম। শিশুদের এবং কিশোর-কিশোরীদের আরও বেশি ঘুম প্রয়োজন—শিশুদের জন্য ১০-১২ ঘণ্টা এবং কিশোরদের জন্য 8-10 ঘণ্টা ঘুম উপযুক্ত। তবে, প্রতিটি ব্যক্তির ঘুমের প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন হতে পারে, তাই আপনার শরীরের সংকেত শুনে সেই অনুযায়ী ঘুমানো ভালো।
Poor Sleep Quality: ঘুম না আসলে করণীয় কি
- রুটিন তৈরি করুন: প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে এবং ওঠার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটা আপনার শরীরকে একটি নিয়মিত ঘুমের রুটিনের সঙ্গে অভ্যস্ত করে তোলে।
- ঘুমের পরিবেশ তৈরি করুন: আপনার ঘরকে শান্ত, অন্ধকার এবং ঠান্ডা রাখুন। এটি ঘুমের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করবে।
- স্ক্রিন টাইম কমান: ঘুমানোর আগে কমপক্ষে এক ঘণ্টা মোবাইল, কম্পিউটার বা টিভির স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুন। এই স্ক্রিনগুলো নীল আলো নির্গত করে, যা ঘুমের হারমোনে বাধা দিতে পারে।
- হালকা খাবার খান: ঘুমানোর আগে ভারী খাবার থেকে বিরত থাকুন। হালকা খাবার বা একটি ছোট পরিমাণ দুধ খেতে পারেন, যা ঘুমাতে সাহায্য করতে পারে।
- শিথিলকরণ কৌশল: গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন, যোগব্যায়াম বা ধ্যানের মতো শিথিলকরণ কৌশল অবলম্বন করুন। এগুলো মনকে শান্ত করতে সাহায্য করবে।
- ব্যায়াম করুন: নিয়মিত শরীরচর্চা ঘুমের গুণগত মান উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে। তবে, ঘুমানোর খুব কাছে ব্যায়াম করতে যাবেন না।
- ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন: সন্ধ্যার পরে ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো ঘুমের গুণমানকে প্রভাবিত করতে পারে।
রাতে ঘুম না হলে কি কি সমস্যা হয়
রাতে ঘুম না হলে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। ঘুমের অভাবে আপনি ক্লান্তি, হতাশা, এবং মনোযোগের অভাব অনুভব করতে পারেন। শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে, যা আপনাকে সহজেই অসুস্থ করে তুলতে পারে। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে গিয়ে নতুন কিছু শেখা বা স্মরণ করা কঠিন হয়ে যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে, ঘুমের অভাব হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস এবং ওজন বাড়ার মতো স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। মোটকথা, ভালো ঘুম না হলে শরীর ও মনের স্বাস্থ্যের ওপর বড় প্রভাব পড়তে পারে।
ঘুম ঠিকমতো হচ্ছে না, সতর্ক করলেন চিকিৎসক!
ডা. অরূপ হালদার বলেন, “নাক ডাকা বা স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো সমস্যার কারণে ঘুম ঠিকভাবে হয় না। তাই এই ধরনের সমস্যায় ভুগলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। একইভাবে, যারা রেস্টলেস লেগ সিনড্রোমে ভুগছেন, তাদেরও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী ওষুধ খেলে আপনিও ভালোভাবে ঘুমাতে পারবেন এবং শরীর থাকবে সুস্থ-সবল।”
Disclaimer: প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
🔴 প্রতিনিয়ত সর্বশেষ খবর পেতে এখনই Google-এ সার্চ করুন “JKNEWS24 Bangla”। পাশাপাশি, আরও দ্রুত আপডেট পেতে এখনই ফলো করুন JKNEWS24 WhatsApp Channel — প্রতিদিনের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ এক ক্লিকে পৌঁছে যাবে আপনার মোবাইলে!
FAQ
Q1. পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার তিনটি লক্ষণ?
দিনভর ক্লান্তি বা অলস লাগা, ঘন ঘন হাই তোলা, খিটখিটে মেজাজ বা মনমরা ভাব—এসবই ঘুমের ঘাটতির সাধারণ লক্ষণ হতে পারে। পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ঘুম না হলে মেজাজের পরিবর্তন ঘটে, যার মধ্যে হতাশা, উদ্বেগ, অতিরিক্ত চাপ, এমনকি অস্থিরতা বা নেতিবাচক চিন্তাও দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি কাজের প্রতি আগ্রহ ও উৎসাহ কমে যায়, মনোযোগ ধরে রাখতেও সমস্যা হয়। তাই শরীর ও মনের ভারসাম্য বজায় রাখতে নিয়মিত ও ভালো ঘুম অত্যন্ত জরুরি।
Q2. পর্যাপ্ত পরিমাণে না ঘুমালে কি হয়?
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে তার প্রভাব পড়ে শরীর ও মনের ওপর দুদিকেই। ঘুমের অভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়, ওজন বেড়ে যেতে পারে, এমনকি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ে। পাশাপাশি মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়, মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি কমে যায়, ফলে কাজের দক্ষতা হ্রাস পায়। ঘুমের অভাবের কারণে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় এবং ক্লান্তির প্রভাবে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও বেড়ে যায়।
Q3. রাতে না ঘুমিয়ে দিনে ঘুমালে কি ক্ষতি হয়?
রাতে না ঘুমিয়ে দিনে ঘুমানোর অভ্যাস শরীরের প্রাকৃতিক জৈবিক ঘড়িকে বিঘ্নিত করে, যার ফলে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এতে ঘুমের মান কমে যায় এবং দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও স্থূলতার মতো রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। পাশাপাশি মনোযোগের ঘাটতি, মানসিক অস্থিরতা, ক্লান্তি ও উদ্বেগও বাড়তে পারে। তাই সুস্থ ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য রাতে নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ঘুমানো অত্যন্ত জরুরি।


