ওপরের দিকে ওঠা সহজ কাজ নয়। হোক সেটা ভবনের সিঁড়ি, কিংবা জীবনের পথ। তবে আজকের আলোচনার বিষয় জীবনের কঠিন সিঁড়িগুলো নয়, বরং একদম বাস্তব — যেটা আমরা প্রায় সবাই প্রতিদিনের জীবনে দেখি, সেটা হলো সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠা।
অনেকেই একটা ব্যাপার খেয়াল করেছেন হয়তো — শরীর ফিট থাকার পরেও সিঁড়ি ভাঙতে গিয়ে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তখন মাথায় প্রশ্ন আসে, “আমার কি কোনো অসুখ হলো নাকি?”
এই দুশ্চিন্তা একেবারে অমূলক নয়, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটা খুবই সাধারণ একটা বিষয়।
আসলে, সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠা হঠাৎ করে শরীরের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। হার্ট দ্রুত কাজ করে, ফুসফুসে অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ে, পেশিগুলো দ্রুত রক্ত চায় — ফলে নিঃশ্বাস দ্রুত হয়, অনেক সময় ভারীও লাগে।
বিশ্বাস করুন, এটাকে “রোগ” ভাবার কিছু নেই। এমনকি নিয়মিত জিমে যাওয়া মানুষ, খেলোয়াড়, অ্যাথলেট — তাঁরাও অনেক সময় সিঁড়ি উঠতে গিয়ে এমন শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। কারণ, সিঁড়ি ভাঙা হঠাৎ করে শরীরকে “কার্ডিও মোডে” নিয়ে যায়, আর তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে শরীরের একটু সময় লাগে।
কেন সিঁড়ি বেয়ে উঠলেই শ্বাসকষ্ট হয়?
সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠতে গিয়ে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে? চিকিৎসাবিদ্যার ভাষায় এই বিষয়টিকে বলা হয় ‘Exertional Intolerance’, যার বাংলা মানে দাঁড়ায় শারীরিক পরিশ্রমে অস্বস্তি অনুভব করা বা পরিশ্রম সহ্য করতে না পারা।
সোজা কথায়, যখন শরীর হঠাৎ করে একটু বেশি পরিশ্রমের মুখে পড়ে — যেমন সিঁড়ি বেয়ে উঠা, দৌঁড়ানো বা ভারী কিছু তোলা — তখন শরীরের ভেতরে অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ে। কিন্তু সেই চাহিদা যদি শরীর ঠিকমতো মেটাতে না পারে, তখনই দেখা দেয় হাঁপ ধরা বা শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
চিকিৎসাবিদ্যা বলছে, যখন কেউ সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে যায়, তখন সাধারণত তাঁর পেশি শিথিল থাকে, হৃদস্পন্দন থাকে ধীর। অর্থাৎ তাঁর শরীর সিঁড়ি ভাঙার জন্য প্রস্তুত থাকে না। এই অবস্থায় যখন কেউ সিঁড়ি ভাঙতে শুরু করে, তাঁকে পর্যায়ক্রমে একেকবার একেক পায়ের ওপর ভর দিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়। এতে হৃদস্পন্দন অনেকটা ‘রকেটগতি’তে বেড়ে যায়। সঙ্গে যুক্ত হয় কার্ডিওভাসকুলার নানা কার্যক্রম। তখন শরীরে হঠাৎ অক্সিজেনের চাহিদা যায় বেড়ে। এই বাড়তি অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ না হলেই তৈরি হয় শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি।
তাহলে সহজে সিঁড়ি ভাঙা যাবে কীভাবে
প্রায়ই সিঁড়ি ভাঙতে গিয়ে যদি মনে হয় নিঃশ্বাস একেবারে আটকে যাচ্ছে — তাহলে আপনি একা নন! এই অভিজ্ঞতা বেশ অস্বস্তিকর, সেটা মানতেই হবে।
তবে একটা ভালো খবর আছে — সিঁড়ি ওঠার এই কষ্টটাকে অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব, আর তার জন্য দরকার শুধু কয়েকটা সহজ ব্যায়াম।
- দৌড়, লাফ বা দ্রুত গতি তুলতে সাহায্য করে, এ ধরনের ব্যায়াম আপনাকে হঠাৎ পরিশ্রমের অস্বস্তি কাটাতে সহায়তা করবে। পা ও পশ্চাৎপেশির ব্যায়াম আপনাকে এক পায়ে ভারসাম্য রাখার মতো কাজে সাহায্য করবে।
- আপনি যদি ধূমপান করেন, তাহলে এখনই সেটা ছাড়ার সময়। শুধু সাধারণ সিগারেট নয়, ই-সিগারেটও শরীরের জন্য ক্ষতিকর — তাই সেটাও বাদ দেওয়া জরুরি।