JKNews24 Bangla, কলকাতা: বিজেপিকে হারাতে একসাথে তৃণমূল-সিপিএম, রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ যেন দিন দিন আরও জটিল হয়ে উঠছে। একসময় বিধানসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা বিজেপি এখন একের পর এক হারের মুখ দেখছে। এর মধ্যেই দীর্ঘদিন ধরে গুঞ্জন ছিল, বামেদের সঙ্গে গেরুয়া শিবিরের নেপথ্য যোগাযোগ রয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন সমবায় নির্বাচনে ‘রাম-বাম’ জোটের অভিযোগ ঘিরে রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে উঠেছিল। কিন্তু এবার পুরো চিত্রটাই বদলে গেল! নতুন অভিযোগ বলছে, বিজেপিকে রুখতে এবার একসঙ্গে মাঠে নেমেছে তৃণমূল (সবুজ শিবির) ও বামফ্রন্ট (লাল শিবির)। এবং সেই জোটবদ্ধ লড়াইয়ের ফলও এসেছে তাদের পক্ষে। বিজেপিকে হারিয়ে বিজয়মাল্য ছিনিয়ে এনেছে এই দুই শিবির।
র্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে হওয়া দুটি গুরুত্বপূর্ণ সমবায় নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে। নন্দকুমার ব্লকের দক্ষিণ নারকেলদা-বেঙ্গিমুদিয়া সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি এবং তমলুক ব্লকের শ্রীরামপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের চংরা কালাগন্ডা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি—এই দুই নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ নারকেলদা-বেঙ্গিমুদিয়া সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির ৫৫টি আসনের মধ্যে তৃণমূল এককভাবে ৪৮টি আসন দখল করেছে, যেখানে বিরোধী জোট প্রার্থীরা মাত্র ৭টি আসন পেয়েছে।
বিজেপির ঝুলিতে মাত্র কয়েকটি আসন
অন্যদিকে, তমলুক ব্লকের শ্রীরামপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের চংরা কালাগন্ডা সমবায় সমিতির পরিচালনা কমিটির নির্বাচনেও দুর্দান্ত জয় পেল তৃণমূল কংগ্রেস। এই সমবায়ে মোট ৯টি আসন ছিল, যেখানে তৃণমূল ৬টি এবং বামেরা ৩টি আসনে প্রার্থী দেয়। ভোট গণনার শেষে দেখা গেল, তৃণমূল তাদের ৬টি আসনেই জয়ী হয়েছে, আর বিজেপির ঝুলিতে গেছে মাত্র ৩টি আসন। তবে এই হার মেনে নিতে নারাজ গেরুয়া শিবির। কারণ, এর আগেও একাধিক সমবায় নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে বিজেপি। এমনকি পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে পুরসভা নির্বাচনেও হার স্বীকার করতে হয়েছে তাদের।
তৃণমূলের বিপুল জয়ের পর তমলুক ব্লক তৃণমূলের সভাপতি অর্ণব চক্রবর্তী উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, “এটা প্রমাণিত হয়ে গেল, বিজেপির সঙ্গে মানুষ এখন আর নেই। ভোট হলেই তৃণমূলের পাশে দাঁড়িয়ে মানুষের সমর্থন পাওয়া যায়। মা, মাটি, মানুষ—এই ভাবেই আমরা সকলের পাশে থাকব, এবং উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে।” অন্যদিকে, পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তমলুক সাংগঠনিক জেলা বিজেপি সহ সভাপতি আশিস মণ্ডল বলেন, “ভোটার তালিকায় কারচুপি, প্রশাসকদের কাজে লাগিয়ে ভোটারদের ভয় দেখানোই এই ফলাফলের কারণ। প্রতিবারই তৃণমূল এই একই পদ্ধতি অনুসরণ করে। তবে তাতে কী হয়েছে? আমরা বেশ কয়েকটি আসনে জয়লাভ করেছি, এবং এটিই আমাদের নৈতিক জয়।”
ভোটের ফলাফল দেখে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি পূর্ব মেদিনীপুরে ধীরে ধীরে বিজেপির সংগঠন ভেঙে যাচ্ছে? কারণ, সম্প্রতি যে জেলা পঞ্চায়েতটি বিজেপির হাতে ছিল, তা এখন চলে এসেছে তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে। এবং এবার সমবায় নির্বাচনে বিজেপি যে পরাজিত হয়েছে, তা আরও একবার এই প্রশ্নকে উত্থাপন করেছে। তবে এখানকার বিজেপি নেত্রী এর পেছনে অন্য এক কারণ দেখাচ্ছেন। তিনি দাবি করেছেন, “এই সমবায় সমিতিতে প্রায় ১২ বছর ভোট হয়নি, বহু দিন পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল। আর তৃণমূল কংগ্রেসের লোকেরা বাইরে থেকে লোক এনে সন্ত্রাস চালিয়েছে।”এতেই প্রমাণিত হচ্ছে, বিজেপিকে হারাতে একসাথে তৃণমূল-সিপিএমের সহযোগিতা আসলে কার্যকরী।