বাংলাদেশের রন্ধনপ্রণালীতে আচার যেন এক বিশেষ জায়গা জুড়ে আছে। ডাল-ভাত হোক বা খিচুড়ি—পাশে একটু আচার না থাকলে অনেকের খাওয়াই যেন ঠিক জমে না। টক-ঝাল-মিষ্টির দারুণ মেলবন্ধন এই আচার, যা একটুখানি খেলেও মুখে আলাদা স্বাদ এনে দেয়।
তবে একটা কথা মাথায় রাখা খুব জরুরি—বিশেষ করে গরমকালে। এই সময়ে যদি রোজ রোজ বেশি পরিমাণে আচার খাওয়া হয়, তাহলে তা শরীরের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। কারণ বেশিরভাগ আচারে লবণ, তেল আর মসলা থাকে বেশি, যা অতিরিক্ত খেলে পেটের সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক এমনকি উচ্চ রক্তচাপেরও কারণ হতে পারে।
বেশি আচার খেলে কী হয়?
বেশি আচার খাওয়ার ক্ষতি
অতিরিক্ত লবণ : আমরা প্রায় সবাই জানি, লবণ বেশি খাওয়া শরীরের জন্য ভালো নয়। কিন্তু যখন সেই লবণ আচারের টক-মিষ্টি স্বাদের মধ্যে গলে যায়, তখন সেটা আলাদা করে বোঝা যায় না। আর সেখানেই লুকিয়ে থাকে বিপদের আসল গন্ধ। আচারে সাধারণত সংরক্ষণের জন্য অনেক বেশি লবণ ব্যবহার করা হয়। এই লবণ কিন্তু আস্তে আস্তে আমাদের শরীরে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। নিয়মিত বেশি পরিমাণে লবণ খেলে রক্তচাপ বাড়ার (হাইপারটেনশন) সম্ভাবনা বেড়ে যায়, যা থেকে হার্টের সমস্যা, স্ট্রোক, এমনকি কিডনির অসুবিধাও দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত তেল : আচার বেশিদিন টিকিয়ে রাখার জন্য এতে বেশি তেল মেশানো হয়। বিশেষত ঝাল আচারে তেলের আধিক্য মুখরোচক মনে হয়। তবে এই তেল শরীরে কোলেস্টেরল বাড়াতে পারে, যা একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।
গ্যাস্ট্রিক ক্যানসার : কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে, অতিরিক্ত পরিমাণে আচার খেলে গ্যাস্ট্রিক ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে, যদিও এখনও এটি পুরোপুরি প্রমাণিত হয়নি। তবে, আচারের কারণে খাদ্যনালি সম্পর্কিত ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ার সম্ভাবনাও আছে।
তবে, সঠিক পরিমাণে আচার খেলে কিন্তু তার উপকারিতা রয়েছে। আচার তৈরিতে ব্যবহৃত তেল, মসলা—যেমন হলুদ, মরিচ, লবণ ইত্যাদি—যথাযথ পরিমাণে থাকলে, এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট যোগ হয়। এই উপাদানগুলি আমাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। অর্থাৎ, সঠিক পরিমাণে আচার খেলে আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম অনেক বেশি কার্যকরী হতে পারে।
সপ্তাহে এক বা দুই দিন, অল্প পরিমাণে আচার খাওয়া ভালো—এতে আপনি স্বাদও পাবেন, আবার শরীরের জন্যও ক্ষতিকর হবে না!