আমরা হয়তো অমরত্ব লাভ করব না, তাই ১০০০ বছর পর কেমন হবে মানুষ তা নিজের চোখে দেখা সম্ভব নয়। তবে বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতের মানুষের বিবর্তন নিয়ে বেশ কিছু চমকপ্রদ পূর্বাভাস দিয়েছেন। ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বিবর্তনীয় জিনতত্ত্ববিদ অধ্যাপক মার্ক থমাস ৩০২৫ সালের মানুষের উচ্চতা, আকর্ষণ এবং এমনকি বুদ্ধিমত্তার সম্ভাব্য পরিবর্তন সম্পর্কে তাঁর মূল্যবান মতামত দিয়েছেন।
সময়ের সাথে সাথে মানুষ খাটো হতে পারে
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে মানুষের উচ্চতা ধীরে ধীরে কমতে পারে। অধ্যাপক মার্ক থমাসের মতে, আমাদের উচ্চতা মূলত খাদ্যাভ্যাস, পরিবেশগত পরিস্থিতি এবং জীবনধারার উপর নির্ভর করে। ঐতিহাসিকভাবে দেখা গেছে, যখন খাদ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ এবং কৃষি উৎপাদন স্থিতিশীল থাকে, তখন মানুষের গড় উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণাসহ বিভিন্ন গবেষণায়ও এটি প্রমাণিত হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে যদি খাদ্য সংকট বা পরিবেশগত পরিবর্তন তীব্র হয়, তাহলে মানুষের উচ্চতা কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।
যাইহোক, এমন একটি তত্ত্বও আছে — যদিও এটি পরীক্ষিত নয় — যা বলে যে খাটো মানুষের অল্প বয়সে সন্তান হতে পারে। যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মে আরও বেশি খাটো ব্যক্তি হতে পারে। কিন্তু আপনি যদি আজ লম্বা হন তবে খুব আত্মবিশ্বাসী হবেন না; এই অনুমান এখনও ব্যাপক জনসংখ্যা গবেষণার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়নি।
অধ্যাপক থমাসের মতে, ভবিষ্যতে সঙ্গী নির্বাচনের স্বাধীনতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে আকর্ষণীয় শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলোর বিস্তার বাড়তে পারে। নারীরা যখন তাদের পছন্দের ভিত্তিতে সঙ্গী নির্বাচন করতে পারবেন, তখন সাধারণত আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিরা বংশবিস্তারের বেশি সুযোগ পেতে পারেন। এর ফলে ভবিষ্যতে গড়ে তুলতে পারে এমন এক জনসংখ্যা, যারা শারীরিকভাবে আরও আকর্ষণীয় হবে। তবে এটি শুধুমাত্র জিনগত পরিবর্তনের ওপর নির্ভর করবে না, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনও এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রযুক্তি-প্রভাবিত ভবিষ্যতে মস্তিষ্ক সংকুচিত হতে পারে
ভবিষ্যতে আমরা হয়তো আরও সুন্দর দেখতে হতে পারি। কিন্তু এর মানে এই নয় যে আমরা বেশি বুদ্ধিমান হবো। অধ্যাপক রবার্ট ব্রুকস ধারণা করেন যে, প্রযুক্তির প্রভাব দিনে দিনে আমাদের জীবনে বাড়বে। এবং এর ফলে আমাদের বুদ্ধিমত্তার ওপর নির্ভরশীলতা কমে যেতে পারে। কম্পিউটার আর মেশিন যখন জটিল কাজগুলো সহজেই করতে পারবে, তখন আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্রম হয়তো কিছুটা সংকুচিত হতে পারে। প্রযুক্তি যতই উন্নত হবে মানুষ তার ক্ষমতা কম্পিউটারের কাছে ছেড়ে দেবে।
এই তত্ত্বটি পশুদের পোষ মানানোর সাথে তুলনা করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে ভেড়া, গরু এবং কুকুরের মতো পোষা প্রাণীদের তাদের বন্য প্রতিরূপের তুলনায় ছোট মস্তিষ্ক থাকে। যদি মানুষ প্রযুক্তির মাধ্যমে নিজেদেরকে “পোষ মানানো” অব্যাহত রাখে, তাহলে আমরাও একই পথ অনুসরণ করতে পারি।
১০০০ বছর পর কেমন হবে মানুষ?
যদি এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলি সত্য হয়, তাহলে ১,০০০ বছর পর মানবজাতি হয়তো আরও ছোটখাটো, শারীরিকভাবে আকর্ষণীয় হতে পারে। আর যেহেতু প্রযুক্তি তখন অনেক উন্নত হবে, তাদের মস্তিষ্কের ওপর এতটা নির্ভরশীল হওয়ার প্রয়োজন নাও থাকতে পারে। প্রযুক্তি তাদের দৈনন্দিন কাজের দায়িত্ব নিতে পারবে, ফলে শারীরিক এবং মানসিকভাবে আরও পরিবর্তিত এক নতুন প্রজন্মের উদ্ভব হতে পারে।