কুশল দাসগুপ্ত,শিলিগুড়ি: বিপদে এখনো পাশে কলকাতা, বাংলাদেশের এক শিশুকে বাঁচিয়ে তুললেন কলকাতার ডাক্তার, অত্যাধুনিক চিকিৎসার জন্য সারা বছরই কাতারে কাতারে রোগী ও পার বাংলা থেকে আসেন এ পার বাংলায়। কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে বছরভরই বাংলাদেশী রোগীর ভিড় লেগে থাকে। কিন্তু পড়শি দেশের বর্তমান অশান্ত পরিস্থিতির কারণে ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রবল কড়াকড়ি শুরু করেছে ভারত সরকার।
নিতান্তই জরুরি ও গুরুতর অসুস্থতা ছাড়া বাংলাদেশী রোগী এ দেশে আসার ভিসা পাচ্ছেন না বলে এখানকার হাসপাতালগুলিতেও ও পার বাংলার রোগীর সংখ্যায় প্রবল ভাটার টান। প্রায় ৮০–৯০% কমেছে রোগী।
এই আবহে বাংলাদেশের একরত্তির জীবনদায়ী অপারেশন হলো ইএম বাইপাস লাগোয়া আনন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। জটিল নিউরোসার্জারির পরে আপাতত সুস্থ সেই ৯ মাসের শিশুপুত্র দেশে ফেরার অপেক্ষায়। যশোরের ৯ মাসের একরত্তি রিদওয়ান হাবিব ইলহামের মা–বাবা গত কয়েক মাস ধরেই লক্ষ্য করছিলেন, বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিশুর মাথার খুলির আকার ক্রমেই যেন বিকৃত হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় ডাক্তাররা জানান, বিরল এক জন্মগত অসুখের শিকার রিদওয়ান। ডাক্তারি পরিভাষায় যার নাম, ক্রেনিয়ো–সাইনোস্টোসিস। ২০ হাজারে একজনের হতে পারে। এতে খুলির ছোট ছোট হাড়গুলি বেখাপ্পা ভাবে জুড়ে গিয়ে বিকৃত মাথার জন্ম দেয়। বাংলাদেশের চিকিৎসকরা একরত্তির মা–বাবাকে কলকাতায় যাওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ, মাথা স্বাভাবিক করার জন্য অস্ত্রোপচারের পরিকাঠামো সে দেশে নেই।
রিদওয়ানকে নিয়ে বাবা আসান হাবিব রুবেল আনন্দপুর ফর্টিস হাসপাতালে আসেন। এক্স–রে ও সিটি স্ক্যানে দেখা যায়, খুলির বাঁ দিকটা যেন তুবড়ে রয়েছে। তড়িঘড়ি অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি নেন ফর্টিসের প্রধান নিউরোসার্জেন জিআর বিজয়কুমার। সাড়ে চার ঘণ্টার লম্বা অপারেশনে ত্রুটিপূর্ণ ভাবে জুড়ে যাওয়া খুলির হাড়গুলিকে কেটে পুনর্গঠন করেন তিনি। সফল অস্ত্রোপচারে এখন রিদওয়ানের খুলি আর পাঁচ জন সমবয়সির মতোই গোলাকার।
বিজয়কুমার জানান, যথাসময়ে চিকিৎসা না–হলে ওই শিশুর চেহারাই যে শুধু খারাপ লাগত তা নয়, মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ও স্নায়বিক নানা সমস্যাও দুর্বিষহ করে তুলতে পারত জীবন। ছিল প্রাণহানির শঙ্কাও। ফর্টিস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, ইদানীং খুবই কমে গিয়েছে বাংলাদেশী রোগী। মাসে চার–পাঁচশো’র বদলে মাত্র ৩০–৩৫ জন রোগীরই চিকিৎসা হচ্ছে। তার মধ্যে রিদওয়ানকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ নিয়ে সুস্থ জীবনে ফেরানো সম্ভব হয়েছ।ভাটা বাংলাদেশি রোগীর স্রোতে, ক্ষতি কলকাতার হাসপাতালের
ফর্টিসেরই মতো বাংলাদেশী রোগীর সংখ্যা শহরের আর পাঁচটা হাসপাতালেও ব্যাপক ভাবে কমে গিয়েছে।